{ads}

যা থাকছে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে Which is in the Land Crimes Prevention and Remedies Act

 

     যা থাকছে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে


অবৈধ ভূমি দখলকে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করে শাস্তি ও জরিমানার বিধান রেখে তৈরি করা হচ্ছে 'ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন'। এটি এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে—আইনটি চলতি ২০২৩ সালেই মন্ত্রিপরিষদে উঠবে।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের ভূমির অপ্রতুলতার কথা মাথায় রেখে সরকার প্রথমবারের মতো অকৃষি জমিতেও সিলিং রাখার বিধান করেছে। প্রাথমিকভাবে 'ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন’-এ ৪০ বিঘা সিলিং (সর্বোচ্চ সীমা) প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে একজন নাগরিকের নামে ৪০ বিঘার বেশি অকৃষি জমির মালিকানা থাকতে পারবে না। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইনে এমন বিধানও রাখা হবে যেন বৃহৎ শিল্প স্থাপনে অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমা কোনও বাধা না হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে বিশেষ আবেদনে সরকার অকৃষি জমির ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত শিল্প স্থাপনে অনুমোদন দিতে পারবে। অন্যদিকে কৃষিজমি সুরক্ষা, অকৃষি জমির সর্বোচ্চ সীমার বিধান, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসের উদ্দেশ্যে করা 'ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন’-এর খসড়াও আগামী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।

আইনের মূল নীতি হচ্ছে “দলিলাদি যার, জমি তার’ এই ভাবনা থেকেই ভূমি অপরাধ আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কেউ যত বছরই জোর করে কোনও জমি দখল করে রাখুক না কেন, যথাযথ দলিলাদি ছাড়া বেআইনি দখলদারের মালিকানা এই আইন কখনই স্বীকৃতি দেবে না। এই আইন প্রণয়নের পর জমি দখল সংক্রান্ত হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, জমির দলিলাদি বলতে যথাযথ নিবন্ধন দলিল, খতিয়ানসহ আনুষঙ্গিক নথিপত্রকে বোঝাবে। বর্তমানে কৃষি জমির সিলিং রয়েছে ৬০ বিঘা। এ ছাড়াও হাট ও বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২৩ ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। হাট-বাজারের জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের দায়ে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে বিলটি উঠানো হয়েছে।

নতুন কিংবা সংশোধিত আইন প্রণয়নের জন্য খসড়ার পাইপলাইনে আরও আছে ''ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন', 'ভূমি উন্নয়ন কর আইন', 'স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল (সংশোধন) আইন', 'ভূমি সংস্কার আইন' এবং 'ভূমি ব্যবহারস্বত্ব গ্রহণ আইন'।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে ক্যাশলেস ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হবে। ১৪ এপ্রিলের পর থেকে আর সরাসরি এলডি ট্যাক্স ( ভূমি উন্নয়ন কর) গ্রহণ করা হবে না। ইতোমধ্যে ক্যাশলেস ই-নামজারি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রায় ৪৫ লাখ নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা প্রদান করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা যা তাৎক্ষণিকভাবে অটোমেটেড চালান সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়ে গেছে।

ভূমি ব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের দেওয়া সরকারি সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে রাজধানীর সাত রাস্তা মোড়ে অবস্থিত তেজগাঁওয়ে ভূমি ভবনে একটি নাগরিক সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ে এ সেবা সম্প্রসারণ করা হবে। জেলাভিত্তিক এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকদেরকে ভূমিসেবা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং এজন্য প্রাইভেট এজেন্টশিপ নীতিমালা করা হচ্ছে। কলসেন্টার ছাড়াও এসব সেবা কেন্দ্রে নাগরিকরা সরাসরি গিয়ে ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া, প্রাইভেট এজেন্ট কার্যক্রম মনিটরের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং উপজেলা ও জেলাভিত্তিক নাগরিক কমিটি করা হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে সিস্টেম চালু করা হয়েছে। দুটি প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ডিজিটাল জরিপ হচ্ছে। একটি প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালীতে জরিপ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মৌজার ডিজিটাল জরিপও সম্পন্ন হয়েছে। অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ৩টি সিটি করপোরেশন (চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন), মানিকগঞ্জ পৌরসভা, ধামরাই উপজেলা ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ডিজিটাল সার্ভে হবে। এসব এলাকা ছাড়া সারাদেশে পটুয়াখালীতে শুরু হওয়া প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল সার্ভে হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ৫ কোটি ২১ লাখের বেশি জমির মালিকানা এবং ৭৫ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ তথ্য অনলাইনে রয়েছে। এ সিস্টেম থেকে প্রায় ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব আদায় হয়েছে। ডাক বিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান পৌঁছে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩ লাখের বেশি খতিয়ান ডাকবিভাগের মাধ্যমে নাগরিকরা হাতে পেয়েছেন। বিদেশেও এই সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিনিয়ত নামজারি খতিয়ান যুক্ত হচ্ছে এ সিস্টেমে। কোনও খতিয়ান থেকে জমি নামজারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মূল খতিয়ান থেকে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট নতুন খতিয়ানে এটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর ফলে জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে এবং মামলা-মোকদ্দমা কমে যাবে।

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এরই মধ্যে চার কোটির অধিক হোল্ডিং ডাটা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। ই-রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের সাথে ই-মিউটেশন সিস্টেমের কারিগরি সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। ই-নামজারির সঙ্গে সঙ্গে হোল্ডিং নম্বরসহ ভূমি উন্নয়ন করও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে যাবে। ১৭টি উপজেলায় এর পাইলটিং হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের ১ লাখ ৩৮ হাজার ম্যাপকে ডিজিটাইজ করাসহ স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয় করা হচ্ছে। এই ম্যাপের উপরে স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লটভিত্তিক জমির শ্রেণীর একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। ২০২৩ সালের মার্চ নাগাদ ১০ হাজার ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ ই-নামজারি সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। নামজারির সঙ্গে সঙ্গে এই ডিজিটাল ম্যাপ ও খতিয়ান স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধিত হতে থাকবে। ভূমি সেবা অ্যাপ থেকে নাগরিকরা তাদের জমির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, অবস্থান ও পরিমাপ তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাবেন। ই-নামজারি সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতি মাসে অনলাইনে প্রায় ২ লাখেরও বেশি নামজারি নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ক্যাশলেস নামজারি সিস্টেম থেকে অনলাইনে আদায়কৃত প্রায় ১৬০ কোটি টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, এরই মধ্যে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নাগরিকদের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কমেছে। কমেছে নাগরিকদের হয়রানি। আশা করছি পাইপলাইনে থাকা আইনগুলো পাস হলে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনায় আর কোনও জটিলতা থাকবে না। তবে এর জন্য মাঠ পর্যায়ে ভূমিসেবার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ক্রমাগত উন্নয়নের জোর দিয়ে তাদের কাজের যথাযথ মনিটরিং দরকার। সেটি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে দেশে ভূমি দস্যুতা থাকবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.