একটি ফ্ল্যাট কেনার আগে কী কী বৈশিষ্ট্য দেখে নিতে হবে
এখানে সংক্ষিপ্তভাবে ফ্ল্যাট কেনার ব্যাপারে কী কী সতর্কতা বাঞ্ছনীয়, তার উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করছি ।
১ । প্রথমেই দেখতে হবে স্থানটি, অর্থাত্ ফ্ল্যাটটি কোথায় । সেখান থেকে হাট বাজার, নিজের কর্মক্ষেত্র, স্কুল,কলেজ, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, হাসপাতাল ইত্যাদির দূরত্ব এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাগুলো ।
২ । ফ্ল্যাটটি কত তলায় অবস্থিত । একদম উপরের তলায় হলে, অত্যধিক গরমের সময় অসুবিধার কথা মাথায় রাখতে হবে এবং দুই তলার বেশী উঁচুতে হলে, লিফ্টের সুবিধা আছে কি না । পরিপার্শ্বিক পরিবেশ আপনার পরিবারের জন্য অনুকূলে কি না ?
৩।ফ্ল্যাটটি যে ব্যক্তির থেকে কিনছেন, তার মালিকানা সঠিক কি না, নিশ্চিত করার জন্য , প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখে নিতে হবে । যদি প্রোমোটার বা ডেভেলাপার থেকে কেনা হচ্ছে, তাহলে যে জমিটির উপর ফ্ল্যাট কেনা হচ্ছে, সেই জমির প্রকৃত মালিকানা কার এবং সরকারী ভাবে সেটা পঞ্জিকৃত আছে কি না, সেটা দেখতে হবে । জমির মালিক এবং ডেভেলাপার মিলে যুক্তভাবে যদি প্রকল্পটি হয়ে থাকে, তবে মালিক এবং ডেভেলাপার এর মধ্যে কি চুক্তিপত্র হয়েছে বিশদে দেখতে হবে এবং বিশেষভাবে দেখতে হবে যে মালিক ডেভেলাপার কে ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য যথাযথ ভাবে কর্তৃত্ব আরোপ করেছেন কি না ? এবং এই চুক্তিপত্রে ফ্ল্যাটের ক্রেতাকে কোনোভাবে অযৌক্তিক শর্তে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে কি না ?
8। যে ফ্ল্যাটটি কিনছেন, বা যে জায়গার উপর ফ্ল্যাটটি কিনছেন সেটি অন্য কোনো ঋণের দায়ে ব্যাংক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধ আছে কি না ?
এবার আসি ফ্ল্যাটের ক্রেতা বিক্রেতার চুক্তিপত্র সম্পর্কে :
ক্রেতা হিসাবে আপনার উচিত্ হবে চুক্তিপত্রটি বার বার পুংখানুপুঙ্খ রূপে দেখে নেয়া । এই চুক্তিপত্রে এমন সব শর্তাবলী লেখা থাকে যেগুলি ঠিকভাবে দেখে না নিলে, এই চুক্তিপত্র ক্রেতার জন্য মৃত্যুবানে পরিনত হতে পারে এবং আইনি সহায়তার সুযোগকে নষ্ট করে দিয়ে ক্রেতাকে বিপদে ফেলে দিতে পারে । সেজন্য এই চুক্তিপত্রটি বারংবার পড়ে দেখে নিন এবং অবশ্যই আপনার সুপরিচিত কোনো আইনজীবি (বিক্রেতার নয়) কে দিয়ে দেখিয়ে নিন । যদিও চুক্তি পত্রে অনেক কিছুর উল্লেখ থাকে, যথা ফ্ল্যাটের আয়তন, কমন স্পেস, প্রতি স্কোয়ার ফিট এর মুল্য, ফ্ল্যাটের দাম মেটাবার পদ্ধতি, পজেশন এর সময় সীমা ইত্যাদি, কিনতু, যে বিষয়গুলি ক্রেতাকে খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে, সেগুলি নীচে একটু আলোচনা করছি ।
ক) সাধারণত: চুক্তিপত্রে দেখা যায় যে ফ্ল্যাটের পজেসনের সময়সীমা একটা সময় ধরে দেখিয়ে দেওয়া হয় । সেটা দু বা তিন বছর, কিনতু নির্দিষ্ট সময় দেয়া হয় না । ক্রেতার উচিত্ হবে এটা নিশ্চিত করা যে চুক্তিপত্রে যেন এই সময়সীমা যাতে নির্দিষ্ট থাকে যথা কোন বছরের কোন মাসের কোন তারিখের ভেতর ফ্ল্যাটটি হস্তান্তর করা হবে ।
খ) চুক্তিপত্রে এটা উল্লেখ থাকে যে যদি ক্রেতা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাটের দাম মিটিয়ে না দেন, তাহলে তাকে শতকরা এত হারে সুদ দিতে হবে । কিনতু, এটা লেখা থাকে না যে যদি প্রমোটার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাটটি পুরোপুরি ভাবে হস্তান্তর না করতে পারেন, তাহলে ক্রেতাকে তিনি কি ক্ষতিপূরণ দেবেন ।
গ) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তর না করার সপক্ষে যে শর্তগুলি চুক্তিপত্রে দেখানো হয় , সেগুলি যেমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দেরী, শ্রমিক সমস্যার জন্য দেরী, হাতের বাইরে কোনো পরিস্থিতির জন্য দেরী ইত্যাদি। এইগুলি সবই অস্পষ্ট শর্তাবলী । কারণ, ধরুন ভূমিকম্পের কারণে যদিও বা ফ্ল্যাটটির নির্মাণে কোনো ক্ষতি হলো না বা শ্রমিকরা কোনো কারণে (যেটাতে ক্রেতার কোনো ভূমিকা নেই) কাজ বন্ধ করে দিলো, তখন ওই সব চাতুরীপূর্ণ শর্তগুলিকে ক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হতে পারে । তারপর, “নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো পরিস্থিতি” এটা পুরোটাই একটি অস্পষ্ঠ শর্ত । পরিস্থিতির নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন ।
ঘ) ক্রয়বিক্রয় চুক্তিতে ক্রেতা, বিক্রেতা উভয়ের পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার দায় বাধ্যতামূলক । কিনতু, বাস্তবে দেখা যায় চুক্তির শর্তগুলির অধিকাংশই বিক্রেতার বা প্রমোটারের সপক্ষে থাকে ।
সুতরাং, এই পরিস্থিতিতে ক্রেতার কি করনীয় ?
১ । ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে একদম তাড়াহুড়ো করবেন না ।
২ । প্রমোটার এর কথাগুলির ভালোভাবে বিশ্লেষন করুন ।
৩।অতিঅবশ্যই আপনার নিজের পরিচিত একজন দক্ষ আইনজীবিকে আপনার সাথে রাখুন । বিক্রেতা বা প্রমোটারের আইনজীবীকে ভরসা করার আগে দ্বিতীয়বার ভাবুন ।
8।গোগুলে বিভিন্ন আইনি সংস্থার সাইটে ফ্ল্যাট কেনাবেচার চুক্তিপত্র পাওয়া যায় । একবার দেখে নিন ।
কষ্টার্জিত পয়সা দিয়ে বাড়ী বা ফ্ল্যাট কেনা । পদে পদে সতর্ক থাকুন । বিপদে পড়ে লড়াই করার চাইতে বিপদ এড়ানোই শ্রেয় ।
If you have any doubt , let me know.