{ads}

কীভাবে বুঝবেন, যে বাড়িতে থাকছেন সেটা ‘কোড’ মেনে তৈরি হয়েছে কিনা?

কীভাবে বুঝবেন, যে বাড়িতে থাকছেন সেটা ‘কোড’ মেনে তৈরি হয়েছে কিনা? How do you know if the house you are living in is made according to the 'code'?



ভূমিকম্প হলেই এই ‘বিল্ডিং কোড’ নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়। তবে বেশিরভাগেরই এই বিষয় অজানা।
বিল্ডিং কোড সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)’য়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.এএফএম সাইফুল আমিন।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো বিল্ডিং কোডের নাম ‘কোড অফ হুমারাবি’। আজ থেকে প্রায় ৩ হাজর ৬শ’ ৭০ বছর আগে একটি শিলালিপিতে এই কোড লেখা হয়েছিল।”
তিনি জানান হুমারাবি কোডের একটি উল্লেখযোগ্য আইন হল— কোনো স্থাপনা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তবে তার জন্য দায়ী তার মালিক।
বাংলাদেশের বিল্ডিং কোড সম্পর্কে এই অধ্যাপক বলেন, “আমাদের দেশের সর্ব প্রথম বিল্ডিং কোড তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। দেশের অভিজ্ঞ প্রকোশলী এবং বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা মিলে বিভিন্ন দেশের বিল্ডিং কোড থেকে আমাদের দেশের উপযোগী নীতিমালাগুলো সংগ্রহ করে এই কোড তৈরি করেছিলেন। পরে ২০০৬ সালে এটি পার্লামেন্ট থেকে গেজেট আকারে প্রকাশ পায়, পরিণত হয় আইনে।”
বিল্ডিং কোডের ব্যবহার ক্ষেত্র সম্পর্কে সাইফুল আমিন বলেন, “বাজার থেকে বাড়ি তৈরির সরঞ্জাম কিনে আর মিস্ত্রি ডেকে ভবন বানাতে শুরু করলে শেষ পর্যন্ত একটি ভবন তৈরি হবে ঠিক, তবে তা ঝুঁকি মুক্ত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। নিরাপদ একটি ভবন বানাতে 
একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর পরামর্শ নিয়ে ভবনের ধরন অনুযায়ী বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি করা উচিত।”
তিনি আরও জানান, বিল্ডিং কোডে সবধরনের ভবনের জন্যই আলো-বাতাস চলাচল করার ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভার-বহন ক্ষমতা, নির্মাণ প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত নীতিমালা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও দূর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে ভবন তৈরি করার ক্ষেত্রে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিল্ডিং কোডে।
বিল্ডিং কোড অনুসরণ করে ভবন বানানো নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মালিকের কর্তব্য সম্পর্কে এই অধ্যাপক জানান, বিল্ডিং কোড সম্পর্কে ভবনের মালিককে কিছু জানার প্রয়োজন নেই। তাকে শুধু ভবন তৈরির জন্য একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারস বাংলাদেশ (আইইবি)’র সদস্য এমন প্রকৌশলীর মাধ্যমে ভবনের নকশা তৈরি করিয়ে নেওয়া উচিত। ভবন তৈরিতে ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্যও একজন প্রকৌশলী নিয়োগ করা উচিত।
সবশেষে নিতে হবে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট। যে কাজের জন্য ভবন তৈরি করা হয়েছে, তাই ওই কাজের জন্য নিরাপদ কিনা তা নিশ্চিত করার সনদ হল অকুপেন্সি সার্টিফিকেট।
যদি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাড়ি বানানো হয় তবে ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা প্রকৌশলীদের যোগ্যতা যাচাই করে নেওয়া উচিত।
তিনি আরও বলেন, “নিরাপদ ভবন তৈরি করার ক্ষেত্রে ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ জরুরি বিষয়। বাড়ি তৈরির পর একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর অনুমোদিত অকুপেন্সি সার্টিফিকেট অবশ্যই নিতে হবে। ভবন তৈরির চুক্তি করার সময়ই চুক্তিতে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটসহ ভবনের গুণগত মান নিশ্চিত করে দেওয়ার শর্ত যোগ করে দেওয়া দরকার।
ভূমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম এমন একটি ভবন তৈরি করতে বিল্ডিং কোডের ভূমিকা বিষয়ে সাইফুল আমিন বলেন, “সবধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করার নিয়মাবলি আছে বিল্ডিং কোডে। তবে এই কোডের ব্যবহারিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারবেন একজন প্রকৌশলী। তাই একজন ভবন মালিককের কর্তব্য হবে অভিজ্ঞ প্রকৌশলী নিয়োগ করা কিংবা ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি তা করছেন কিনা সে বিষয় যাচাই করা। সঠিকভাবে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করলেই কেবল একটি ভবন দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.