জমি বেদখল হলে কিভাবে উদ্ধার করবেন? কিংবা বেদখল হলে করণীয় কি করবেন
বাংলাদেশ আদালতে যে মামলাগুলো করা হয় তার অধিকাংশই মামলা জমি জমা সংক্রান্ত কিংবা জমিকে ঘিরে মারামারি বা অন্য কোন বিরোধ নিয়ে মামলা করা হয়েছে। জমি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়া, জমি বেদখল হওয়া, জবর দখলের চেষ্ঠা, দলিল ও খতিয়ানের সমস্যা, ওয়ারিশ জমির বন্টন সহ নানা কারণে ব্যপক মামলা মোকদ্দামা হয়ে থাকে। আজকের ইনফোতে “জমি বেদখল হলে কিভাবে উদ্ধার করবেন? কিংবা বেদখল হলে করণীয় কি করবেন?” শেয়ার করা হলো।
সম্পত্তি বেদখল বলতে প্রকৃত মালিক বা ভোগদখলদারকে জোর করে উচ্ছেদ করা কিংবা অবৈধভাবে অন্য ব্যক্তির দখল প্রতিষ্ঠা করাকে বুঝানো হয়ে থাকে। আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমি বেদখল করেছে প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা। এমন অনেকে আছে বৈধ মালিকানা থাকলেও প্রভাবশালীদের কারণে জমিতে নামতে পারেন না। এছাড়াও বাংলাদেশের আদালতের দুরাবস্থার কারণে অনেকেই মামলা করতেও চান না।
জমি বে-দখল হলে ফিরে পাওয়ার উপায়
আপনার জমি বেদখল হলে কি করবেন? কিংবা জমির বৈধ মালিকানা আছে তবুও কেউ জোর করে যদি দখল করে ফেলে তাহলে ফিরে পাওয়ার জন্য দুটি কাজ করতে পারেন। অর্থাৎ দুই ভাবে আপনি বে-দখল জমি ফিরে পেতে পারেন।
প্রথমত, স্থানীয়ভাবে সালিশ-দরবার করে অর্থাৎ গ্রামের গুণীজনের মাধ্যমে বিচার সালিশ করে।
দ্বিতীয়ত, আদালতে মামলা করার মাধ্যমে বে-দখল জমি ফিরে পাওয়া।
বিচার সালিশের মাধ্যমে বে-দখল জমি উদ্ধার
আপনার জমি যদি বেদখল হয়ে যায় এবং নিজে নিজে যদি উদ্ধার করতে গেলে মারামারির সম্ভবনা থাকে তাহলে স্থানীয়ভাবে বিচার- সালিশের ব্যবস্থা করুন। বিচার সালিশ-দরবার করে যদি জমি ফিরে না পান তাহলে আপনাকে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে।
সালিশে যথা সম্ভব এলাকার গুণী মানুষদের উপস্তিততি এবং ন্যায় কথা বলে এমন লোক অবশ্যই ডাকবেন। কেননা দখলদার প্রভাবশালী লোক হলে বিচারকদের হাত করে নিতে পারে। বর্তমান সমাজে এই রীতি চালু হয়েছে যে, গ্রামের সালীশকারীরাও টাকার বদলে কথা বলে। ন্যায় নীতি তাদের কাছে গরুত্ব পায় না। তাই ন্যায় কথা বলতে পারে এমন লোক সালিশে থাকা আব্যশক।
এলাকার মেম্বার, চ্যায়ারমেনকে সালিশে উপস্থিত থাকার ব্যবস্থা করলে সালিশের সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্যতা বেশি হবে। আপনার সমস্যার কথা আগে এলাকার লোক জনের কাছে শেয়ার করুন।
গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে বেদখল জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্ঠা করা সব থেকে উত্তম। কেননা এটি উত্তম এই কারণে যে, আপনি কম খরচেই জমি ফিরে পেতে পারেন। এর সুবিধাগুলো হচ্ছে-
১) আপনার আর্থিক খরচ সাশ্রয় হবে।
২) সময় কম লাগবে। এমনও হতে পারে এক দিনের সালিশে আপনার সমাধান হতে পারে।
৩) বিভিন্ন অফিসিয়াল হয়রানি থেকে বেচে যাবেন।
৪) মালিকানার সামাজিক স্বীকৃতি পেয়ে যাবেন।
মামলা করার মাধ্যমে জমি উপদ্ধার করার উপায়
জমি বে-দখল হলে তা উদ্ধারের জন্য দু ধরণের মামলা করতে পাবেন। আপনার কাগজপত্র দেখে আইনজীবীগণ সিদ্ধন্ত নিবেন কি ধরণের মামলা করলে আপনার অধিকার ফিরে পাবেন। এই বিষয়ে দুই ধরণের মামলা তথা ফৌজদারী ও দেওয়ানী উভয় ধরণের মামলা করা যায়।
মামলা করার ক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, মামলার এজাহার সাজানো ঠিকভাবে না হলে সঠিক বিচার নাও পেতে পারেন। তাই একজন দক্ষ আইনজবীবী নিয়োগ দেওয়া আপনার জন্য জরুরী বিষয়। এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
ফৌজদারি আদালতের মামলার সুবিধা-অসুবিধা
ফৌজদারি মামলা সাধারণত জবর দখলকারীরর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য করা হয়ে থাকে। এটাকে অনেকেই ১৪৫ মামলা বলে ডাকে। কারণ হলো কার্যাবিধি আইনের ১৪৫ ধারায় এই মামলা করতে হয়। দখল ফিরে পেতে হলে বে-দখলের দুই মাসের মধ্যে ফৌজদারি এই মামলা করতে হয়ে।
এ ধরণের মামলায় আপনি কার্যাকরী বিচার নাও পেতে পারেন। কেননা কেউ যদি জোর করে দখল করে ফেলে তাহলে আদালত তাকে দখল ছেড়ে দিতে বলবে না। আদালত শুধুমাত্র বে-দখল চেষ্টাকারীকে প্রতিহত করার আদেশ দিয়ে থাকেন।
তবে এই মামলার মাধ্যমে যে সুবিধা পাওয়া যায় তা হচ্ছে, ১৪৫ ধারার মামলা খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
দেওয়ানি আদালতের মামলা
আপনার জমি বেদখল হলে দেওয়ানি আদালতে বিভিন্ন ধরণের মামলা করতে পারবেন। কি ধরণের মামলা করলে সুবিধা পাবেন তা নির্ধারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ একজন আইনজীবীর কাছে পরামর্শ নিন।
দেওয়ানি আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি জরুরী হচ্ছে, একজন দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া। আপনার জমির কাগজপত্র সহ নিজেই আইজীবীর সাথে সরাসরি আলোচনা করবেন। কেননা আপনার জমির ব্যপারে আপনার থেকে অন্য কেউ ভাল জানবে না এটাই স্বাবাভিক।
বর্তমানে ইন্টারনেট সুবিধার ফলে আইন সম্পর্কে নিজেই ধারণা নিতে পারেন। কেননা গুগলে সার্চ দিলেই আইন সম্পর্কিত সকল ধারা চলে আসে। তাই নিজেই আইনের ধারা জেনে আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করলে বেশি লাভবান হবেন।
মালিকানাহীন জমি উদ্ধারের মামলা
মালিকানাহীন জমি যদি আপনার বে দখল হয়ে যায় তাহলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের-৯ ধারায় দেওয়ানি আদালতে দখল পুণ:রুদ্ধারের মোকদ্দামা করতে পারেন।
বেদখল হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে দখল উদ্ধারের মামলা করতে হবে। ৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে এই ধরণের মামলা দায়েরের তামাদি শেষ হয়ে যায়।
এই ধরণের মামলার ক্ষেত্রে জমির মালিকানা কার সেটা দেখা হয় না, সর্বশেষ কে দখলে ছিল তা বিবেচনা করে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়।
তবে সরকার কর্তৃক জমি বেদখল হলে এই মামলায় কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে না।
বৈধ মালিকানা জমি বেদখল হলে যে মামলা করবেন
সম্পত্তিতে বৈধ মালিকানা আছে এমন জমি যদি আপনার বেদখ হয়ে যায়, স্থানীয় বিচার সালিশের মাধ্যমে যদি ফিরে পাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে বেদখল হওয়ার পরবর্তী ১২ বছরের মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের -৮ ধারা মতে দেওয়ানি আদালতে মামলা করে সম্পত্তি দখল পুররুদ্ধার করতে পারবেন। এ ধরণের মামলা করতে হলে সম্পত্তিতে আপনার মালিকানা স্বত্ব থাকতে হবে।
অর্থাৎ মালিকানা স্বত্ব ব্যক্তি বাদি হয়ে মামলা করতে হবে। অন্য কেউ এই ধরণের মামলা করলে, বাদির কোন স্বত্ব না থাকলে মামলার রায় বা আইনের ফাঁকে দখলদাররা সুযোগ নিতে পারে।
ঘোষণামূলক মামলা কেন করা হয়?
দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা হয় এই কারণে যে, ক্রয়কৃত জমিতে কেউ যেন অংশ দাবি করতে না পারে।
মনে করুন, আপনার ভোগদখলকৃত জমিতে হঠাৎ করে আপনার এক প্রতিবেশি অংশ দাবি করছে। জোড় করে জমিতে দখল নিয়েছে কিংবা দখল নেওয়ার চেষ্ঠা করছে।
এমন অবস্থায় আপনি ৪২ ধারায় আদালতের কাছে এই মর্মে ঘোষণা নিতে পারেন যে, আপনার ক্রয়কৃত দলিলে বর্ণিত জমির মধ্যে অন্য কারো অধিকার নেই, কাজেই দখলের চেষ্টাও অবৈধ।
আরো জানুন:
শেষকথাঃ
আশাকরি জমি বেদখল হলে কিভাবে উদ্ধার করবেন তা এই ইনফো থেকে জেনে গেছেন। এই বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনাদের যে কোন কমেন্ট আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করি। আর এই ইনফোটি আপনার কাছে প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেখে দিন, প্রয়োজনের সময় যাতে নিজের ওয়াল থেকেই সহজেই পেতে পারেন।
If you have any doubt , let me know.