বিভিন্ন প্রকার দলিল ও তাদের সংজ্ঞা
জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে দলিলের গুরুত্ব অনেক। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোন সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর করার জন্য দলিল সম্পাদান করা বাধ্যতামূলক। আজকের ইনফোতে আমরা বিভিন্ন প্রকারের দলিল ও তাদের সংজ্ঞা এবং দলিল রেজিস্টার করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো।
বিক্রয় কি বা বিক্রয়ের সংজ্ঞা কি?
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫৪ ধারায় বিক্রয় ধারা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- বিক্রয় হইল পরিশোধিত মূল্যের বা পরিশোধ করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বা আংশিক পরিশোধিত এবং আংশিক পরিশোধ করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মূল্যের বিনিময়ে মালিকানা হস্তান্তর করাকে বিক্রয় বলা হয়।
ক্রয়-বিক্রয় বা বিভিন্ন ধরণের চুক্তি করার জন্য যে লিখিত কাগজ করা হয় তাকে আমরা দলিল বলে থাকি। এই দলিল বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন: সাব কবলা দলিল, বায়নাপত্র দলিল বা বিক্রয়চুক্তি দলিল, হেবা ঘোষণাপত্র দলিল, দান বিষয়ক ঘোষণাপত্র দলিল, ভ্রম সংশোধন দলিল, দানপত্র দলিল ইত্যাদি।
বিভিন্ন প্রকার দলিল ও তাদের সংজ্ঞা:
সাব কবলা দলিল: ক্রয় বিক্রয় করার ক্ষেত্রে যে দলিল সম্পন্ন হয় তাকে সাব কবলা দলিল বলে। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- পরিশোধিত বা আংশিক পরিশোধিত এবং আংশিক পরিশোধ করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আর্থিক মূল্যের বিনিময়ে কোন সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তর করতে যে দলিল করা হয় তাকে কবলা দলিল বলে।
বায়নাপত্র দলিল বা বিক্রয়চুক্তি দলিল: কোন সম্পদ ক্রয় করার উদ্দেশ্যে বায়না করার জন্য যে দলিল সম্পাদিত হয়, তাকে বায়নাপত্র দলিল বলে। রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ১৭ ক (২) ধারা মতে এ দলিল সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য দাখিল করতে হয়।সংজ্ঞা: কোন সম্পত্তি স্থিরকৃত শর্তে এবং সাব্যস্তকৃত মূল্যের আংশিক প্রাপ্তির পর উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বিষয়ে পক্ষগণের মধ্যে যে দলিল সম্পাদিত হয়, তাকে বায়নাপত্র দলিল বলে।
হেবা ঘোষণাপত্র দলিল: যে দলিলের মাধ্যমে বিনিময়ে কোন কিছু গ্রহণ করা ছাড়াই পূর্বের কোন সুনির্দিষ্ট সময়ে নূন্যতম দুইজন স্বাক্ষির উপস্থিতিতে মৌখিক ঘোষনার মাধ্যমে হস্তান্তরিত সম্পত্তির স্বীকৃতি প্রদান করা হয় তাকে হেবা ঘোষণা দলিল বলে। এই দলিল শুধুমাত্র নিজদের মধ্যে সম্পাদিত হয়। যেমন- স্বামী- স্ত্রী, পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, দাদা-দাদি, নানা-নানি, নাতি-নাতনি, সহদর ভাইগণের মধ্যে ও সহদর বোনগণের মধ্যে এই দলিল সম্পাদিত হতে পারে।
দান বিষয়ক ঘোষণাপত্র দলিল: হেবা ঘোষণাপত্র দলিলের মত যে দলিলের মাধ্যমে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীগণের স্ব স্ব ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইন মোতাবেক সম্পাদিত হয় তাকে ”দান বিষয়ক ঘোষণা দলিল” বলে। এই দলিল নির্দিষ্ট সম্পর্কের মধ্যে সম্পাদিত হয়। যেমন- পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, দাদা-দাদি ইত্যাদির মধ্যে দান বিষয়ক দলিল সম্পাদিত হয়।
ভ্রম সংশোধন দলিল: যে দলিলের মাধ্যমে মূল দলিলের বস্তগত বিষয়সমুহ অপরিবর্তিত রেখে পূর্ববর্তী দলিলের করণিক ভুল (clerical mistake) বা (bonafide mistake) সংশোধন করা হয় তাকে ভ্রম সংশোধন বলে। এই দলিল মূল দলিলের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।
দানপত্র দলিল: সম্পত্তি দান করার জন্য যে দলিল করা হয় তাকে দানপত্র দলিল বলে। সংজ্ঞা: যে দলিলের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় এবং পণ ব্যতীত কোন সম্পত্তি অন্য কোন ব্যক্তির নিকট হস্তান্তর করেন এবং দান গ্রহীতা বা তার পক্ষে অন্য কেউ উক্ত সম্পত্তি গ্রহন করেন তাকে দানপত্র দলিল বলে।
এওয়াজ বা বিনিময় দলিল: এই দলিল যে দুটি বা ততধিক পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত হয়, তাতে জিনিসের পরিবর্তে অন্য জিনিসের মালিকানা পরিবর্তন হয়।সংজ্ঞা: যে দলিলের মাধ্যমে এক পক্ষের কোন জিনিসের মালিকানার পরিবর্তে অপর পক্ষের কোন জিনিসের মালিকানা হস্তান্তর হয় তাকে এওয়াজ বা বিনিময় দলিল বলে।
হেবা-বিল-এওয়াজ দলিল: প্রতীকী কোন বস্তুর বিনিময়ে কোন সম্পত্তি দান করা হয় যে দলিলের মাধ্যমে তাকে হেবা-বিল-এওয়াজ দলিল বলে। প্রতীকী বস্তু যেমন- ধর্মীয় গ্রন্থ, জায়নামাজ, তসবিহ ইত্যাদি।
বন্ধক দলিল: এই দলিল সাধারণত বর্তমান বা ভবিষ্যৎ দেনা পরিশোধের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়ে থাকে। সংজ্ঞা: যে দলিলের মাধ্যমে ঋণ হিসেবে অগ্রিম প্রদত্ত বা ভবিষ্যতে প্রদেয় অর্থ পরিশেধের নিশ্চয়তা কিংবা আর্থিক দায় সৃষ্টি করতে পারে এইরুপ কোন কাজ সম্পাদনের অঙ্গীকার হিসেবে নির্দিষ্ট স্বাবর সম্পত্তির স্বার্থ হস্তান্তর করা হয় তাকে বন্ধক দলিল বলে।
পুনঃসমপর্ণপত্র দলিল: এই দলিল বন্ধকদাতা কর্তৃক গৃহীত ঋণের সমুদয় অর্থ পরিশোধের পর বন্ধক গ্রহীতা এ ধরনের দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দিয়ে থাকেন।সংজ্ঞা: যে দলিলের মাধ্যমে গ্রহীত ঋণের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তির বন্ধক-গ্রহীতা বন্ধকী সম্পত্তি বন্ধক দাতার বরাবরে হস্তান্তর করেন তাকে পুনঃসমর্পণ দলিল বলে।
বন্টননামা দলিল: সম্পত্তির অংশীদারগণ সম্পত্তি পৃথকভাবে ভাগ করে নেওয়ার জন্য এ ধরণের দলিল করে থাকেন। সংজ্ঞা: যে দলিলের মাধ্যমে কোন সম্পত্তির অংশীদারগণ বা সহমালিকগণ নিজেদের মধ্যে উক্ত সম্পত্তি পৃথকভাবে গাগ বা বন্টন করে নেন তাকে বন্টননামা দলিল বলে।
বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্ণি দলিল: কোন একক লেনদেন সংক্রান্ত এক বা একাধিক দলিল রেজিস্ট্রি করার একমাত্র উদ্দেশ্যে অথবা একটি বা একাধিক অনুরুপ দলিলের সম্পাদন স্বীকার করার ক্ষমতা প্রদানের জন্য ব্যবহৃত দলিলকে বিশেষ পাওয়ার অব অ্যাটর্ণি দলিল বলে।
দলিল রেজিস্টার করার নিয়ম
দলিল রেজিস্টার করার সঠিক নিয়ম না জানার কারণে কোন দালালের খপ্পরে পড়ে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। তাই এ বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকা জরুরী। যে কোন দলিল সাধারণত উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসে রেজিস্টার করা হয়। সঠিকভাবে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার জন্য নিচের বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন।
** দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র
** রেজিস্ট্রেশনের জন্য দলিল দাখিলের পূর্বে ভালভাবে দেখতে হবে, দলিলে কোন ভুল রয়েছে কিনা
** দলিল দাখিলের সময়সূচি: সাধারণত সকাল ১০ ঘটিকা থেকে বিকাল ৩ ঘটিকা।
** দলিল উপস্থাপনের সময়সীমা
** দলিল রেজিস্ট্রেশনে আপত্তি/অভিযোগের দরখাস্ত
** দলিলের রেজিস্ট্রেশন ফি, কর ও শুল্ক
** সাব-রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য গ্রহন করতে অস্বীকার করলে করনীয় কি? ইত্যাদি।
শেষকথাঃ
আশাকরি দলিল সম্পর্কে ও দলিল রেজিস্টার সম্পর্কে জানতে এই ইনফোটি আপনাকে সাহায্য করবে। দলিল সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানান। আপনার জানার আগ্রহ থেকে ইনফোটি আপডেট করা হবে ইনশাল্লাহ।
আপনার কাছে এই ইনফোটি প্রয়োজনীয় মনে হলে শেয়ার করে নিজের ওয়ালে রেকে দিন, যাতে প্রয়োজনের সময় সহজেই খুজে পেতে পারেন। আমাদের সাইটের ইনফোগুলো আপনার কাছে ভাল লাগলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে শেয়ার করে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিন।
If you have any doubt , let me know.