{ads}

পানির ট্যাংকি, সরবরাহের পাইপ জীবানুমুক্তকরণের উপায়

পানির ট্যাংকি, সরবরাহের পাইপ জীবানুমুক্তকরণ


নির্মাণের পরপর একটা বাড়ির ব্যবহারকারীদের পানি সরবরাহ শুরুর আগে পানির পাইপ ও ট্যাংক থেকে জীবানু দুর করা জরুরী। এছাড়া কিছুদিন ব্যবহার বন্ধ থাকলে পূণরায় শুরু করার আগে এবং পাইপ বা ট্যাংকে কোনো মেরামতের কাজ চললে তারপর এগুলোকে জীবানুমুক্ত করা দরকার। এছাড়া বন্যা বা অন্য কোনো কারণে নিচতলার রিজার্ভ ট্যাংকে বাইরের জীবানুযুক্ত পানি প্রবেশ করতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থাকে জীবানুমুক্ত করতে যা করতে হবে তা হল নিম্নরূপ:
সমস্ত পানির ট্যাংকের তলায়, দেয়াল এবং ছাদে লেগে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে দেয়ালগুলো ব্রাশ দিয়ে ঘষে তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। সমস্ত পানির পাইপগুলোর ভেতর থেকে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কারের জন্য এগুলো দিয়ে পানি প্রবাহ করা ছাড়াও প্রয়োজনে শক্ত ও চিকন দন্ডের মাথায় পরিষ্কার ন্যাকড়া বেঁধে সেটা দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি লিটারে ৫০ মিলিগ্রাম ঘনত্বের ক্লোরিন দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে। খেয়াল করুন, এখানে ক্লোরিনের কথা বলা হয়েছে, সুতরাং প্রযুক্ত কেমিকেলে থাকা ক্লোরিনের পরিমান জেনে ডোজ ঠিক করতে হবে; যেমন ৩৩% ক্লোরিন দেয়া ব্লিচিং পাউডার হলে প্রতি লিটারে ১৫০ মিলিগ্রাম লাগবে; অর্থাৎ প্রতি ১০০০ লিটারের পানির জন্য ১৫০ গ্রাম কড়া ব্লিচিং পাউডার লাগবে; যদি ব্লিচিং-এর শক্তি/ধক কমে যায় তাহলে আরো বেশি দিতে হবে। এরপর নিচের ও ছাদের ট্যাংকি সহ পুরা পাইপ লাইন এই পানি দিয়ে ভরতে হবে। ছাদে পানি তোলার পর প্রয়োজনে বিভিন্ন ফ্লোরের কলগুলো একটু করে খুলে ক্লোরিন মেশানো পানি আসা পর্যন্ত ছেড়ে রাখতে হবে; এই পানি আসলে তারপর কল বন্ধ করতে হবে। কলগুলোর বাইরের অংশ এই ক্লোরিন পানি দিয়ে মাঝে মাঝেই ধুয়ে দিন। এছাড়াও পানির ট্যাংকের যে অংশে পানি লাগে না (ছাদ ও উপরের ধার) সেখানেও এই পানি দিয়ে মাঝে মাঝে ধুয়ে দিন। এভাবে ক্লোরিন পানি ভরে পুরা পাইপলাইন ও ট্যাংককে ২৪ ঘন্টা রেখে দিন (সর্বনিম্ন ৬ ঘন্টা)। তারপর কল ও ভালভ খুলে সমস্ত পানি ধীরে ধীরে বের হয়ে যেতে দিন। এবার জীবানুমুক্ত হয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক সরবরাহ চালু করার জন্য প্রস্তুত। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যদি সরবরাহকৃত পানিতে নিয়মিতভাবেই জীবানু আসে অর্থাৎ সরবরাহ লাইনে লিকেজের কারণে কোন উৎস থেকে পানি দূষিত হয়েই আসে তাহলে এভাবে পুরা লাইন পরিষ্কার করলেও কোনো লাভ হবে না। এরকম ক্ষেত্রে অবিরতভাবে ক্লোরিন দিয়ে রিজার্ভ ট্যাংকের পানি জীবানুমুক্ত করতে প্রয়োজন হবে। এজন্য পরবর্তীতে বর্ণিত পাতকূয়া জীবানুমুক্তকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। ৪.২ টিউবওয়েল জীবানুমুক্তকরণ টিউবওয়েল স্থাপনের সময়ে বাইরের জলাশয়ের পানি ব্যবহারের কারণে এর মধ্যে জীবানু চলে আসে। এছাড়া পাইপ স্থাপনের আগে করা লম্বা গর্তের পাশ ভেঙ্গে পড়া রোধ করতে দুষিত রাসায়ানিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া বন্যার সময় ডুবে গেলে টিউবওয়েলের ভেতরে দুষন তথা জীবানু আস্তানা গাড়তে পারে। তাই কয়েকটি ক্ষেত্রেই টিউবওয়েলকে জীবানুমুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এজন্য যা করতে হবে - ৫০ লিটারের মত ৫০ মিলিগ্রাম/লিটার ঘনত্বের ক্লোরিন দ্রবণ প্রস্তুত করতে হবে। (ব্লিচিং পাউডারে ৩৩% ক্লোরিন থাকলে প্রতি লিটারের জন্য ০.১৫ গ্রাম মেশাতে হবে) গোড়া থেকে টিউবয়েলটা (এখানে নলকূপের মাথায় লাগানো পানি তোলার হ্যান্ডপাম্পটার কথা বুঝানো হয়েছে) খুলে নিয়ে নলকূপের পাইপের মধ্যে সেই ক্লোরিনের দ্রবণটা ধীরে ধীরে ঢেলে দিতে হবে। ক্লোরিন দ্রবণটায় পাইপ ভরে যাবে, এরপর আস্তে আস্তে সেই দ্রবণ ফিল্টার পাইপের মধ্য দিয়ে ভূ-স্তরে প্রবেশ করবে। হ্যান্ডপাম্পটাকে পার্ট বাই পার্ট খুলে সবগুলো অংশ ক্লোরিন পানিতে ডুবিয়ে রাখুন বা ধুয়ে নিন। প্রয়োজনে বেশি বড় কোন অংশের পৃষ্ঠদেশ ঐ পানি ভেজানো ন্যাকড়া দিয়ে মুছুন। এরপর হ্যান্ডপাম্পটাকে আবার জুড়ুন এবং নলকূপের মাথায় লাগিয়ে ফেলুন। ক্লোরিন পানি প্রবেশ করানোর পর কমপক্ষে ৬ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর যতক্ষণ পাম্প করে সমস্ত ক্লোরিন পানি বের করে ফেলুন; যতক্ষণ ক্লোরিণের গন্ধওয়ালা পানি বের হবে ততক্ষণ যাবৎ পাম্প করতে হবে (স্থানীয় ভাষায় কল টানতে হবে)। পাম্পিং শেষ হলে সাধারণ ব্যবহারের জন্য টিউবওয়েলটা প্রস্তুত। ৪.৩ পাতকূঁয়া এবং পুকুর জীবানুমুক্তকরণ বিশেষত গ্রামাঞ্চলের কিছু জায়গায় এখনও পাতকূঁয়া বা ইন্দারা খাবার পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমনকি কোনো কোনো জায়গায় সংরক্ষিত পুকুরের পানিও রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। এই সব উৎসগুলোও মাঝে মাঝে জীবানুমুক্ত করার দরকার হয়ে পড়ে। এই উৎসগুলোতে পানি প্রাকৃতিকভাবে উন্মুক্ত থাকে বলে অবিরত জীবানুনাশ করা প্রয়োজন। এজন্য এখানকার পানিতে অবিরত স্বল্পমাত্রায় ক্লোরিন মেশানোর জন্য নিম্নের লগসই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক কলস পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে পরবর্তী চিত্র ৫ এর মত করে তলে ছিদ্রওয়ালা একটি কলসে পর্যায়ক্রমে বড় ও ছোট নুড়ি পাথর (২০ – ৪০ মিলিমিটার আকারের) ভরতে হবে। মাঝে বালুর সাথে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দিতে হবে – এক্ষেত্রে বালু আর ব্লিচিং এর অনুপাত হবে ২:১, অর্থাৎ এক কেজি ব্লিচিং এর সাথে দুই কেজি বালু মিশাতে হবে। তারপর এর মুখ পর্যন্ত আবার ছোট ও বড় নুড়ি পাথর দিয়ে ভরতে হবে। এরপর কলসটিকে দড়ি দিয়ে পাতকূঁয়ার ভেতরে ধীরে ধীরে নামিয়ে ডুবিয়ে দিতে হবে। এরকম আয়োজনের ফলে ভেতরের ব্লিচিং থেকে ধীরগতিতে পানিতে ক্লোরিন ছড়াতে থাকবে। এটা নামানোর পর প্রথম কয়েকদিন অবশ্য পানিতে ক্লোরিন একটু বেশিই মনে হবে। এক কেজি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে এভাবে ২০০ – ৩০০ ঘনমিটার পানি পরিশোধন করা যাবে। যখন পানিতে আর ক্লোরিনের গন্ধ পাওয়া যাবে না তখন সেটা তুলে আবার নতুন করে বালু ও ব্লিচিং পাউডার মিশ্রন দিতে হবে। চিত্র ৫: পাতকূঁয়া এবং পুকুর জীবানুমুক্ত করার জন্য এক কলসি এবং দুই বয়াম পদ্ধতির ব্যাখ্যামূলক চিত্র দুই বয়াম পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে দুটি ভিন্ন আকারের মাটির বা প্লাস্টিকের বয়াম দিয়ে চমৎকার ক্লোরিন প্রয়োগ যন্ত্র বানানো যায়। বাইরের বয়ামের মুখ দিয়ে ছোট বয়াম না ঢুকলে, বড় বয়ামের বদলে ঢাকনা ওয়ালা প্লাস্টিকের বালতি ব্যবহার করে সেটার মুখটা ভাল করে বেঁধে আটকে দেয়া যেতে পারে। চিত্র 5এ এর আয়োজন বিস্তারিত দেয়া আছে। এখানে ভেতরের ছোট বয়ামে বালু আর ব্লিচিং পাউডার ২:১ অনুপাতে মিশিয়ে কিছু অংশ ফাঁকা রেখে ভরতে হবে। এই মিশ্রনের উপরের অংশে বয়ামের পৃষ্ঠে একটা ছোট ছিদ্র করতে হবে (১ সেন্টিমিটার আকারের)। বাইরের বালতি বা বয়ামের নিচের দিকেও অনুরূপ আরেকটা ছিদ্র করতে হবে। ছোট বয়ামের মুখ ভালভাবে আটকে এটাকে বড় বয়ামের (বা বালতির) মাঝে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন চিত্রের মত এদের ছিদ্রগুলো পরষ্পরের বিপরীত পাশে থাকে। বড় বয়ামের মুখ আটকে এটাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে আস্তে আস্তে কূঁয়াতে নামিয়ে ডুবিয়ে দিতে হবে। এরকম দুই বয়াম পদ্ধতিতে এক কলসি পদ্ধতির চেয়ে সুনিয়ন্ত্রিত ভাবে পানিতে ক্লোরিন মিশতে পারে। একবার ক্লোরিন দিলে সাধারণত কয়েক সপ্তাহ এটা থেকে জীবানুমুক্ত করার মত ক্লোরিন বের হয়। যখন পানিতে আর ক্লোরিনের গন্ধ পাওয়া যাবে না তখন এটিকে পুণরায় তুলে ক্লেরিন বালু দিয়ে রিফিল করে কূঁয়াতে পূণস্থাপন করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
  1. এই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।

    উত্তরমুছুন

If you have any doubt , let me know.