ভূমিকম্প আতঙ্ক দূরে ঠেলে মানুষকে সচেতন করে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদি আহমেদ আনসারী। অধ্যাপক আনসারী ১৯৯১ সালে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে একই বিভাগে শিক্ষকতায় যোগ দেন। পরে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অফিস ফর আরবান সেফটি প্রকল্পের পরিচালনাসহ বিভিন্ন সংগঠনে দুর্যোগ নিয়ে কাজ করেন। প্রথম আলোর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভূমিকম্প নিয়ে জনগণ বা সরকার দুই পর্যায়েই অসচেতনতা রয়েছে। তিনি বলেছেন, কীভাবে ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলা করা যায়, সতর্ক ও নিরাপদ থাকা যায়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মোর্শেদ নোমান
প্রথম আলো: ভূমিকম্প যেহেতু পুরোপুরি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাই আতঙ্কিত না হয়ে সেটির প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। কিন্তু কী ধরনের প্রস্তুতি দরকার।
মেহেদি আহমেদ আনসারী: শুরুতেই একটি উদাহরণ দিয়েই শুরু করি। ২০১০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি ভূমিকম্প হয়েছে চিলি ও হাইতিতে। চিলির ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ এবং হাইতির ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৩। অনেক বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলেও চিলিতে মারা গেছে ৫০০ জন, পক্ষান্তরে হাইতিতে প্রাণহানি ঘটেছে তিন লাখেরও বেশি। এর কারণ হলো ১৯৬০ সালের চিলিতে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে সেখানকার প্রায় সব ভবনই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেই ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে গত ৫০ বছরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিল চিলির সরকার। কঠোর নিয়মকানুন ও বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণের উদ্যোগের কারণে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করে ভূমিকম্প প্রতিরোধে উদাহরণ তৈরি করেছে চিলির সরকার। চিলির সরকারের এ উদ্যোগ সরকারি দিক থেকে সচেতনতার প্রমাণ। এর সঙ্গে সেখানকার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা বড় ভূমিকা পালন করেছে।
মেহেদি আহমেদ আনসারী: শুরুতেই একটি উদাহরণ দিয়েই শুরু করি। ২০১০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি ভূমিকম্প হয়েছে চিলি ও হাইতিতে। চিলির ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮ এবং হাইতির ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৩। অনেক বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলেও চিলিতে মারা গেছে ৫০০ জন, পক্ষান্তরে হাইতিতে প্রাণহানি ঘটেছে তিন লাখেরও বেশি। এর কারণ হলো ১৯৬০ সালের চিলিতে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে সেখানকার প্রায় সব ভবনই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেই ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে গত ৫০ বছরে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিল চিলির সরকার। কঠোর নিয়মকানুন ও বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণের উদ্যোগের কারণে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন নির্মাণ করে ভূমিকম্প প্রতিরোধে উদাহরণ তৈরি করেছে চিলির সরকার। চিলির সরকারের এ উদ্যোগ সরকারি দিক থেকে সচেতনতার প্রমাণ। এর সঙ্গে সেখানকার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা বড় ভূমিকা পালন করেছে।
গবেষণা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, ভূমিকম্প প্রতিকার ও প্রতিরোধে প্রস্তুতি হতে হবে তিনটি স্তরে। প্রথমটি হলো, সাধারণ মানুষের প্রস্তুতি। এর মধ্যে রয়েছে তিনি যে ভবনটিতে থাকেন সেটি ভূমিকম্প সহনীয় কি না, যদি ভূমিকম্প সহনীয় না হয় তাহলে সেটাকে ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা। নতুন ভবন তৈরির ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মেনে ভূমিকম্প সহনীয় ভবন তৈরি করা। এ ছাড়া ভূমিকম্প পূর্বপ্রস্তুতি, ভূমিকম্পের সময় করণীয় এবং ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে করণীয়গুলো জেনে রাখা। মোটকথা এ বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন থাকা। দ্বিতীয় স্তরে সচেতনতার বিষয়টি হলো, জাতীয় প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি এবং সবশেষে সরকারের সমন্বয়।
প্রথম আলো: আপনি বলছিলেন সাধারণ মানুষের প্রস্তুতির কথা। যেসব ভবন তৈরি হয়ে আছে সেগুলোকে কীভাবে ভূমিকম্প সহনীয় হিসেবে গড়ে তোলা যায়?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: শুরুতেই ভবনগুলোর ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট বা বিস্তারিত প্রকৌশল মূল্যায়ন করে নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভবনটি যেখানে রয়েছে সেখানকার মাটি পরীক্ষা করা, ভবনটির ফাউন্ডেশন বা ভিত্তির ওজন নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কি না, ভবনের কলাম ও বিমে পর্যাপ্ত রড আছে কি না, কলামের ধারণক্ষমতা রয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলো। এগুলো পরীক্ষা করে ভবনে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান করা যায়। ফেরোস্কেনিং ও কোরকাটিংয়ের মাধ্যমে সহজেই এ পরীক্ষা করা যায়।
প্রথম আলো: সেটা কীভাবে? আর এতে খরচই বা কেমন? আমাদের দেশে এটা করার মতো সক্ষমতা আছে?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: অবশ্যই। শুরুতে ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে নিতে হবে। এ জন্য প্রতি বর্গফুটে খরচ হতে পারে ৫ থেকে ১০ টাকার মতো। অর্থাৎ ২০০০ বর্গফুটের ছয়তলা একটি ভবনের মূল্যায়ন করতে খরচ হবে মাত্র ৬০ হাজার টাকা। গড় হিসাব করলে এটা খুবই বেশি নয়। মূল্যায়নের পর যদি কোনো সমস্যা থাকে, সে সমস্যা সমাধানের জন্য ভবনটিকে রেট্রোফিট করে নিতে হবে।
রেট্রোফিট হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেটা দিয়ে পুরোনো ভবন না ভেঙে যথাযথ শক্তিশালী করা। এ পদ্ধতিটি কিছুটা ব্যয়বহুল, যদিও নিরাপত্তার বিচারে সেটা অনেক বেশি নয়। এটি করতে প্রতি বর্গফুটে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এ হিসাবে ২০০০ বর্গফুটের ছয়তলা একটি ভবনের রেট্রোফিট করতে খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। ওই ভবনটি যদি ১০টি ফ্ল্যাটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট হয় তাহলে প্রতি মালিকের খরচ হবে ছয় লাখ টাকা করে। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখলে এটি খুব বড় ব্যয় নয়। তার পরও সরকার যদি স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করে কিংবা কোনো তহবিলের মাধ্যমে ভর্তুকি দেয় তাহলে এটা অসম্ভব নয়।
রেট্রোফিট করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশেও উদাহরণ রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৫ থেকে ৯০ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনকে রেট্রোফিট করা হয়। এটি আগে চারতলা ছিল। কলাম ছিলই না। আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে গুলশান শ্যুটিং ক্লাবের উল্টো দিকে ইউকেএআইডির একটা ভবন। আজকাল অনেক ভবন নতুনভাবে রেট্রোফিট করা হচ্ছে। গত এক বছরে ১০ থেকে ১৫টা তৈরি পোশাকশিল্পের ভবন রেট্রোফিট করা হয়েছে।
আর আমাদের সক্ষমতার কথা বলতে গেলে বলতে পারি যে আজ থেকে দুই বছর আগেও একটা ভবন ভূমিকম্প সহনীয় কি না, তা বলার মতো দক্ষ প্রকৌশলী আগে হয়তো ৫০ থেকে ১০০ জন ছিলেন আমাদের। এখন সংখ্যাটি ৫০০-এর মতো হবে। এখন কমপক্ষে ৫০টি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
প্রথম আলো: পুরোনো ভবনের বিষয়টি তো বললেন, নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কী ধরনের সতর্কতা প্রয়োজন?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: ভবন নির্মাণে সতর্কতার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন রি-ইনফোর্সড কংক্রিটের শুরুতে লোহার যে বেড় তৈরি করা হয়, সেটির টাই-রডকে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া ভবনের বিমের ও কলামের বিল্ডিংয়ের রডকে কোড অনুসারে ডিটেইলিং করার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এতে ভবন নির্মাণের ব্যয় সামান্য বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ভবন যদি প্রস্থের চেয়ে দৈর্ঘ্যে অনেক বেশি হয়, তাহলে এর বিভিন্ন অংশ আলাদা করা যেতে পারে। যেমন লিফটের অংশটুকু মূল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত না হলে ভালো হয়। আবার খেয়াল রাখতে হবে, ঘরের জানালা যেন খুব বেশি বড় না হয়।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে চলা এবং সেটা মেনেই ভবন নির্মাণ করা। বিল্ডিং কোডের মূল ব্যাপারটি হচ্ছে জীবনের নিরাপত্তা। এসব ভবন বিধ্বস্ত হলেও জীবন বেঁচে যাবে। কিন্তু এ জন্য কিন্তু প্রতি বর্গফুটে ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ করাই যথেষ্ট। এ প্রক্রিয়ায় কিছু বাড়তি রড দিতে হবে। বিল্ডিংটা যাতে বাঁশের মতো হয়, বাঁশ যেমন মচকায়, ভাঙে না; তেমন করে তৈরি করতে হবে। এ ধরনের ভবনে ভূমিকম্প হলেও আমরা অবস্থান করতে পারব। এ ধরনের ভবনই আমাদের দেশে এখন অনেক বেশি। আমাদের এখানে পাঁচ হাজার টাকা বর্গফুটের ফ্ল্যাট যেমন রয়েছে তেমনি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাটও বিক্রি হচ্ছে। এত ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি ব্যয় খুবই নগণ্য।
আরেক ধরনের ভবন হচ্ছে, যেগুলোকে বলা হয় ইমিডিয়েট অকুপেনসি। বড় ঝাঁকুনিতেও একেবারেই ভাঙবে না। এ জন্য প্রতি বর্গফুটে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ বাড়বে।
প্রথম আলো: শুরুতেই আপনি জাতীয় প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি এবং সবশেষে সরকারের সমন্বয়ের কথা বলছিলেন। সেটা কীভাবে হবে?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: আমাদের দেশে যেসব নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর ভূমিকাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), অন্যান্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনগুলোর ভূমিকা ঠিকমতো না হলে জটিলতা ও সমস্যা তৈরি হবে। ভবন নির্মাণে বিধিমালা মানা হচ্ছে কি না, সেসবের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ এসব সংস্থাকেই করতে হবে। শহরকেন্দ্রিক দুর্যোগে ইনসিডেন্ট কমান্ড সিস্টেম গঠন জরুরি। এ ক্ষেত্রে মেয়ররা ভূমিকা নেবেন, তাই মেয়রের ক্ষমতায়ন একটি বড় বিষয়। এখানে মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট বা নগর সরকারের ধারণাটিকে সমানে আনা জরুরি। পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজটি করে থাকে। শিশু জিহাদের উদ্ধার বা রানা প্লাজা ধসের ঘটনার সময় আমরা দেখেছি যে প্রশিক্ষিত বাহিনী ব্যর্থ হওয়ার পর অপ্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেছেন। আমাদের এখানে বড় দুর্ঘটনা হলেই কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু সারা বিশ্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, কর্মকর্তারা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে বসে সব তথ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত পাঠান। এখানে সমন্বয় নেই পুলিশের কাজেও। রানা প্লাজা ধসের পর উদ্ধার তৎপরতার সময় সমন্বয়ের সমস্যাটি সবার কাছে প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। একটি ভবনের ক্ষেত্রে এ অবস্থা হলে হাজার হাজার ভবন ভাঙলে কী অবস্থা হবে?
সাধারণ জনগণকেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। মালিকেরা ব্যয় সামান্য বাড়ালেই ভূমিকম্প সহনশীল ভবন হয়, এ বিষয়ে তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে যে বিধিমালা মেনে চললে তাঁদেরই লাভ। অন্যদিকে ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, সেসব বিষয়েও সচেতন করতে হবে মানুষকে। অনেক সময় দেখবেন এ ধরনের দুর্যোগে ভয়ে লাফিয়ে পড়ার কারণে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ সময়ই মানুষ ভবন থেকে দৌড়ে নেমে আসছেন। কিন্তু নিয়ম হলো, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, যেখানেই থাকি না কেন। আগে থেকেই চিহ্নিত করে রাখা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে: যেমন টেবিলের তলায় ঢুকে পড়া, দেয়ালঘেঁষে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, চুলা বন্ধ রাখা, লিফটে না ওঠা ইত্যাদি। এরপর ভবন ভেঙে পড়লেও সেখানটায় একটা ‘ট্রায়াঙ্গল অব লাইফ’ বা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া যাবে। এ হচ্ছে ন্যূনতম পূর্বসতর্কতা। তবে আসল বিষয় হলো, ভবনটি ভূমিকম্প সহনীয় না হলে এসব পূর্বসতর্কতাও কোনো কাজে আসবে না।
জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি প্রকৌশলী সম্প্রদায় যাঁরা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কাজ করেন, তাঁদের সচেতন হতে হবে ভবন নির্মাণে নীতিমালা মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে। সরকারি-বেসরকারি সব খাতের প্রকৌশলীদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের সমন্বয়ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
প্রথম আলো: এখানে সরকারের ভূমিকাটি কী হবে?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: সরকারের প্রধান কাজ হবে নীতিগত দিক থেকে। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মোকাবিলার প্রস্তুতির বিষয়গুলোও সরকারের। সরকারের হয়ে এ কাজগুলো করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তবে তার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করাই হবে প্রথম কাজ। এ কাজটি এখনই শুরু করতে হবে। তাহলেই হয়তো আগামী ১০ বছরের মধ্যে আমরা প্রতিটি ভবনের মান চিহ্নিত করে দিতে পারব কালার কোড দিয়ে। রানা প্লাজা ধসের পর আমরা যেভাবে কালার কোড দিয়ে গার্মেন্টস ভবনগুলো চিহ্নিত করেছিলাম, এখনো একই কাজ করতে পারি। তখন অন্তত এ তথ্যটি জানা থাকবে কোন ভবন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তারপর চালিয়ে নিতে হবে ভবন মজবুত করার কাজ।
আর উদ্ধার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সরকারকেই বড় ভূমিকা নিতে হবে। আমরা সব সময়ই বলে আসছি ভবন যদি ভূমিকম্প সহনীয় হয়, তাহলে ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি সবই কম হবে। তার পরও উদ্ধারকাজ চালাতে হবে। উদ্ধারকাজের জন্য সরকার প্রায় দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীকে ৬৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি দিয়েছে। এর মধ্যে আছে কাটিং মেশিন, সার্চার রেসকিউ ক্যামেরা, পাম্প মেশিন ইত্যাদি ছোটখাটো জিনিস। তবে উদ্ধার তৎপরতার জন্য বুলডোজার, ডোজারসহ অনেক যন্ত্রপাতি আমাদের দেশের সেনাবাহিনী ও বেসরকারি খাতের অনেকের কাছেই আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য আর ১৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার একটি প্রকল্পও রয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের হাতে, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কার্যালয়েও ছোটখাটো যন্ত্রপাতি থাকতে পারে।
উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিতে সরকার ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী তৈরি করারও যে উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এসবই ভূমিকম্পের জন্য করা হচ্ছে। এসব স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্যোগের সময় প্রশিক্ষিত বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। নেতৃত্বে থাকবেন প্রশিক্ষিতরাই। দুর্যোগের বড় ধাক্কা সামাল দিতে পরিকল্পনা নিয়ে না এগোলে কাজ হবে না। যতই যন্ত্রপাতি কেনা হোক না কেন, সমন্বিতভাবে কাজ না করলে কিছুই হবে না। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের ফোন নম্বর যেভাবে মানুষের কাছে থাকে তেমনি এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবীদের নম্বরও মানুষের কাছে থাকা উচিত।
প্রথম আলো: নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের দিকনির্দেশনা কী থাকা উচিত।
মেহেদি আহমেদ আনসারী: প্রথম বিষয়টি হলো, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে তদারক করা। আরেকটি বিষয় হলো ঢাকায় অনেক জায়গাতেই মাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু ভরাট করার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে না। অনেক ডেভেলপার আছেন যাঁরা আর্থিক ব্যয়ের অজুহাতে এ কাজটা করতেই চান না। কিন্তু বন্যাপ্রবণ, ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা সব এলাকা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ পদ্ধতিকে বলে বলা হয় রিস্ক সেনসেটিভ ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানিং। এ পরিকল্পনা অনুসারে নরম জায়গায় ভবন তৈরিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সেটার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। মাটি ভরাটের সময় নিচে শক্ত মাটি যেখানটায় আছে সে পর্যন্ত দুরমুজ করে যেতে হবে। স্যান্ড কমপেকশন, জেট গ্রাউটিং, ডাইনামিক কমপেকশন, ভাইব্রোকমপেকশন পদ্ধতির মাধ্যমে মাটির উন্নয়ন করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হলো মানুষকে জানানো। কোন এলাকাটি রিস্ক সেনসেটিভ সেটা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। এসব জায়গায় ভবন নির্মাণের মাটি ঠিকমতো ভরাট হচ্ছে কি না, যথাযথভাবে পাইলিং করা হচ্ছে কি না, সেটার ওপর নজর রাখতে হবে।
প্রথম আলো: ভূমিকম্প ঝুঁকি ও সতর্কতার কথা অনেক হলো। সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাই, আমরা কতটা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছি?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের আশপাশের অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঘটনাগুলোর কথা তুলে ধরতে চাই। আমাদের আশপাশের অঞ্চলে ১৮৬৯ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৮৬৯ সালে ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ৭.৫ মাত্রার, ১৮৮৫ সালে ঢাকা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে মধুপুরে ৭.১ মাত্রার এবং ১৮৯৭ সালে ঢাকা থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এই ভূমিকম্পটির সময় ঢাকায় আহসান মঞ্জিল আংশিক বিধ্বস্ত হয়। তখন নবাব আহসানউল্লাহকে ১৫ দিন তাঁবুতে কাটাতে হয়েছে। সে সময় পুরো ভারতে ১ হাজার ৫৪২ জন মারা যান, যাঁর মধ্যে ঢাকায় ১০ জন। ওই সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র এক লাখ। পরিধি ছিল ১৫ থেকে ২০ বর্গকিলোমিটার। পাকা ভবন ছিল ১০০-এর মতো। এর মধ্যে আহসান মঞ্জিল, আরমানিটোলা চার্চসহ ১০ থেকে ১২টি ভবন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন ঢাকার পরিধি সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৭ বর্গকিলোমিটার। চারপাশের নদীসহ ধরলে ৩৭০ বর্গকিলোমিটার। রাজউকের এলাকার মধ্যে আছে ১ হাজার ৫৩০ বর্গকিলোমিটার। সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০ শতাংশই ভরাট মাটি। নদী দিয়ে মাপলে ৬৫ শতাংশ ভরাট এবং ৩৫ শতাংশ আদি মাটি।
নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কথাই যদি ধরি, মূল ভূমিকম্পটি হয়েছে কাঠমান্ডু থেকে পশ্চিম দিকে। তারপর কয়েকটি আফটার শক হয়েছে এবং সর্বশেষটি হয়েছে দার্জিলিংয়ের দিকে, যার মাত্রা ছিল ৫.৯। প্রথমটি থেকে এটার দূরত্ব ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার এবং এ ক্ষেত্রে ক্রমেই আফটার শকগুলো পূর্ব দিকে সরে এসেছে। পূর্ব দিক মানেই হচ্ছে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, আমাদের এই জোনে ২০১৫ সালের ২৬ মে থেকে ২০১৬ সালের ২৬ মের মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ মাত্রার অন্তত একটি হবে, ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত অন্তত চারটি হবে এবং ৫ থেকে ৬ পর্যন্ত অন্তত আটটি হবে। কারণ, সৃষ্ট ফাটলের নড়াচড়া এখনো থামেনি। এর মধ্যে একটা বড় ভূমিকম্প যদি হয়ে যায় তো হলোই। তারা সেটা অনুমান করতে চাচ্ছে না।
১৮৬৯ সালের ভূমিকম্প আমাদের দিকে হয়েছে। ১৮৯৭ সালেরটিও এদিকেই হয়েছে, একই রেখা ধরে। ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার দিকে হলো; ২০০৫ সালে কাশ্মীরে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্ব দিকটায় ৮০ থেকে ১০০ বছর ধরে ডরমেন্ট হয়ে আছে। এনার্জি সঞ্চিত হচ্ছে। যেকোনো সময় এর বিচ্ছুরণ ঘটতে পারে। তাই প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া আমাদের গতি নেই।
প্রথম আলো: তাহলে সতর্কতার ক্ষেত্রে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলা, দুর্যোগ প্রস্তুতি, দুর্যোগকালীন করণীয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা ও উদ্যোগের বিকল্প নেই। প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ নিলে ঝুঁকির পরিমাণটিই কমিয়ে আনা যায়। আমরা তো ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারব না। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ড, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তদারকি এবং মানুষের সচেতনতাই পারে বড় ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে।
প্রথম আলো: আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
মেহেদি আহমেদ আনসারী: আপনাকে ও প্রথম আলোর পাঠকদেরও ধন্যবাদ।
প্রথম আলো: আপনি বলছিলেন সাধারণ মানুষের প্রস্তুতির কথা। যেসব ভবন তৈরি হয়ে আছে সেগুলোকে কীভাবে ভূমিকম্প সহনীয় হিসেবে গড়ে তোলা যায়?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: শুরুতেই ভবনগুলোর ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট বা বিস্তারিত প্রকৌশল মূল্যায়ন করে নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভবনটি যেখানে রয়েছে সেখানকার মাটি পরীক্ষা করা, ভবনটির ফাউন্ডেশন বা ভিত্তির ওজন নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কি না, ভবনের কলাম ও বিমে পর্যাপ্ত রড আছে কি না, কলামের ধারণক্ষমতা রয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলো। এগুলো পরীক্ষা করে ভবনে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর সমাধান করা যায়। ফেরোস্কেনিং ও কোরকাটিংয়ের মাধ্যমে সহজেই এ পরীক্ষা করা যায়।
প্রথম আলো: সেটা কীভাবে? আর এতে খরচই বা কেমন? আমাদের দেশে এটা করার মতো সক্ষমতা আছে?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: অবশ্যই। শুরুতে ডিটেইলড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে নিতে হবে। এ জন্য প্রতি বর্গফুটে খরচ হতে পারে ৫ থেকে ১০ টাকার মতো। অর্থাৎ ২০০০ বর্গফুটের ছয়তলা একটি ভবনের মূল্যায়ন করতে খরচ হবে মাত্র ৬০ হাজার টাকা। গড় হিসাব করলে এটা খুবই বেশি নয়। মূল্যায়নের পর যদি কোনো সমস্যা থাকে, সে সমস্যা সমাধানের জন্য ভবনটিকে রেট্রোফিট করে নিতে হবে।
রেট্রোফিট হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেটা দিয়ে পুরোনো ভবন না ভেঙে যথাযথ শক্তিশালী করা। এ পদ্ধতিটি কিছুটা ব্যয়বহুল, যদিও নিরাপত্তার বিচারে সেটা অনেক বেশি নয়। এটি করতে প্রতি বর্গফুটে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এ হিসাবে ২০০০ বর্গফুটের ছয়তলা একটি ভবনের রেট্রোফিট করতে খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। ওই ভবনটি যদি ১০টি ফ্ল্যাটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট হয় তাহলে প্রতি মালিকের খরচ হবে ছয় লাখ টাকা করে। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখলে এটি খুব বড় ব্যয় নয়। তার পরও সরকার যদি স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করে কিংবা কোনো তহবিলের মাধ্যমে ভর্তুকি দেয় তাহলে এটা অসম্ভব নয়।
রেট্রোফিট করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশেও উদাহরণ রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৫ থেকে ৯০ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনকে রেট্রোফিট করা হয়। এটি আগে চারতলা ছিল। কলাম ছিলই না। আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে গুলশান শ্যুটিং ক্লাবের উল্টো দিকে ইউকেএআইডির একটা ভবন। আজকাল অনেক ভবন নতুনভাবে রেট্রোফিট করা হচ্ছে। গত এক বছরে ১০ থেকে ১৫টা তৈরি পোশাকশিল্পের ভবন রেট্রোফিট করা হয়েছে।
আর আমাদের সক্ষমতার কথা বলতে গেলে বলতে পারি যে আজ থেকে দুই বছর আগেও একটা ভবন ভূমিকম্প সহনীয় কি না, তা বলার মতো দক্ষ প্রকৌশলী আগে হয়তো ৫০ থেকে ১০০ জন ছিলেন আমাদের। এখন সংখ্যাটি ৫০০-এর মতো হবে। এখন কমপক্ষে ৫০টি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
প্রথম আলো: পুরোনো ভবনের বিষয়টি তো বললেন, নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কী ধরনের সতর্কতা প্রয়োজন?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: ভবন নির্মাণে সতর্কতার ক্ষেত্রে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন রি-ইনফোর্সড কংক্রিটের শুরুতে লোহার যে বেড় তৈরি করা হয়, সেটির টাই-রডকে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া ভবনের বিমের ও কলামের বিল্ডিংয়ের রডকে কোড অনুসারে ডিটেইলিং করার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এতে ভবন নির্মাণের ব্যয় সামান্য বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ভবন যদি প্রস্থের চেয়ে দৈর্ঘ্যে অনেক বেশি হয়, তাহলে এর বিভিন্ন অংশ আলাদা করা যেতে পারে। যেমন লিফটের অংশটুকু মূল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত না হলে ভালো হয়। আবার খেয়াল রাখতে হবে, ঘরের জানালা যেন খুব বেশি বড় না হয়।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে চলা এবং সেটা মেনেই ভবন নির্মাণ করা। বিল্ডিং কোডের মূল ব্যাপারটি হচ্ছে জীবনের নিরাপত্তা। এসব ভবন বিধ্বস্ত হলেও জীবন বেঁচে যাবে। কিন্তু এ জন্য কিন্তু প্রতি বর্গফুটে ২০ থেকে ২৫ টাকা খরচ করাই যথেষ্ট। এ প্রক্রিয়ায় কিছু বাড়তি রড দিতে হবে। বিল্ডিংটা যাতে বাঁশের মতো হয়, বাঁশ যেমন মচকায়, ভাঙে না; তেমন করে তৈরি করতে হবে। এ ধরনের ভবনে ভূমিকম্প হলেও আমরা অবস্থান করতে পারব। এ ধরনের ভবনই আমাদের দেশে এখন অনেক বেশি। আমাদের এখানে পাঁচ হাজার টাকা বর্গফুটের ফ্ল্যাট যেমন রয়েছে তেমনি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দামের ফ্ল্যাটও বিক্রি হচ্ছে। এত ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়তি ব্যয় খুবই নগণ্য।
আরেক ধরনের ভবন হচ্ছে, যেগুলোকে বলা হয় ইমিডিয়েট অকুপেনসি। বড় ঝাঁকুনিতেও একেবারেই ভাঙবে না। এ জন্য প্রতি বর্গফুটে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা খরচ বাড়বে।
প্রথম আলো: শুরুতেই আপনি জাতীয় প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি এবং সবশেষে সরকারের সমন্বয়ের কথা বলছিলেন। সেটা কীভাবে হবে?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: আমাদের দেশে যেসব নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর ভূমিকাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), অন্যান্য নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং সিটি করপোরেশনগুলোর ভূমিকা ঠিকমতো না হলে জটিলতা ও সমস্যা তৈরি হবে। ভবন নির্মাণে বিধিমালা মানা হচ্ছে কি না, সেসবের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ এসব সংস্থাকেই করতে হবে। শহরকেন্দ্রিক দুর্যোগে ইনসিডেন্ট কমান্ড সিস্টেম গঠন জরুরি। এ ক্ষেত্রে মেয়ররা ভূমিকা নেবেন, তাই মেয়রের ক্ষমতায়ন একটি বড় বিষয়। এখানে মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট বা নগর সরকারের ধারণাটিকে সমানে আনা জরুরি। পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কাজটি করে থাকে। শিশু জিহাদের উদ্ধার বা রানা প্লাজা ধসের ঘটনার সময় আমরা দেখেছি যে প্রশিক্ষিত বাহিনী ব্যর্থ হওয়ার পর অপ্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেছেন। আমাদের এখানে বড় দুর্ঘটনা হলেই কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। কিন্তু সারা বিশ্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দেখা যায়, কর্মকর্তারা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রে বসে সব তথ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত পাঠান। এখানে সমন্বয় নেই পুলিশের কাজেও। রানা প্লাজা ধসের পর উদ্ধার তৎপরতার সময় সমন্বয়ের সমস্যাটি সবার কাছে প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে। একটি ভবনের ক্ষেত্রে এ অবস্থা হলে হাজার হাজার ভবন ভাঙলে কী অবস্থা হবে?
সাধারণ জনগণকেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। মালিকেরা ব্যয় সামান্য বাড়ালেই ভূমিকম্প সহনশীল ভবন হয়, এ বিষয়ে তাঁদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে যে বিধিমালা মেনে চললে তাঁদেরই লাভ। অন্যদিকে ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, সেসব বিষয়েও সচেতন করতে হবে মানুষকে। অনেক সময় দেখবেন এ ধরনের দুর্যোগে ভয়ে লাফিয়ে পড়ার কারণে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ সময়ই মানুষ ভবন থেকে দৌড়ে নেমে আসছেন। কিন্তু নিয়ম হলো, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, যেখানেই থাকি না কেন। আগে থেকেই চিহ্নিত করে রাখা জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে: যেমন টেবিলের তলায় ঢুকে পড়া, দেয়ালঘেঁষে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, চুলা বন্ধ রাখা, লিফটে না ওঠা ইত্যাদি। এরপর ভবন ভেঙে পড়লেও সেখানটায় একটা ‘ট্রায়াঙ্গল অব লাইফ’ বা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া যাবে। এ হচ্ছে ন্যূনতম পূর্বসতর্কতা। তবে আসল বিষয় হলো, ভবনটি ভূমিকম্প সহনীয় না হলে এসব পূর্বসতর্কতাও কোনো কাজে আসবে না।
জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি প্রকৌশলী সম্প্রদায় যাঁরা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কাজ করেন, তাঁদের সচেতন হতে হবে ভবন নির্মাণে নীতিমালা মানা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে। সরকারি-বেসরকারি সব খাতের প্রকৌশলীদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের সমন্বয়ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
প্রথম আলো: এখানে সরকারের ভূমিকাটি কী হবে?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: সরকারের প্রধান কাজ হবে নীতিগত দিক থেকে। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মোকাবিলার প্রস্তুতির বিষয়গুলোও সরকারের। সরকারের হয়ে এ কাজগুলো করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তবে তার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করাই হবে প্রথম কাজ। এ কাজটি এখনই শুরু করতে হবে। তাহলেই হয়তো আগামী ১০ বছরের মধ্যে আমরা প্রতিটি ভবনের মান চিহ্নিত করে দিতে পারব কালার কোড দিয়ে। রানা প্লাজা ধসের পর আমরা যেভাবে কালার কোড দিয়ে গার্মেন্টস ভবনগুলো চিহ্নিত করেছিলাম, এখনো একই কাজ করতে পারি। তখন অন্তত এ তথ্যটি জানা থাকবে কোন ভবন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তারপর চালিয়ে নিতে হবে ভবন মজবুত করার কাজ।
আর উদ্ধার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সরকারকেই বড় ভূমিকা নিতে হবে। আমরা সব সময়ই বলে আসছি ভবন যদি ভূমিকম্প সহনীয় হয়, তাহলে ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি সবই কম হবে। তার পরও উদ্ধারকাজ চালাতে হবে। উদ্ধারকাজের জন্য সরকার প্রায় দুই বছর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীকে ৬৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি দিয়েছে। এর মধ্যে আছে কাটিং মেশিন, সার্চার রেসকিউ ক্যামেরা, পাম্প মেশিন ইত্যাদি ছোটখাটো জিনিস। তবে উদ্ধার তৎপরতার জন্য বুলডোজার, ডোজারসহ অনেক যন্ত্রপাতি আমাদের দেশের সেনাবাহিনী ও বেসরকারি খাতের অনেকের কাছেই আছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য আর ১৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার একটি প্রকল্পও রয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের হাতে, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কার্যালয়েও ছোটখাটো যন্ত্রপাতি থাকতে পারে।
উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিতে সরকার ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী তৈরি করারও যে উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এসবই ভূমিকম্পের জন্য করা হচ্ছে। এসব স্বেচ্ছাসেবীরা দুর্যোগের সময় প্রশিক্ষিত বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। নেতৃত্বে থাকবেন প্রশিক্ষিতরাই। দুর্যোগের বড় ধাক্কা সামাল দিতে পরিকল্পনা নিয়ে না এগোলে কাজ হবে না। যতই যন্ত্রপাতি কেনা হোক না কেন, সমন্বিতভাবে কাজ না করলে কিছুই হবে না। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের ফোন নম্বর যেভাবে মানুষের কাছে থাকে তেমনি এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবীদের নম্বরও মানুষের কাছে থাকা উচিত।
প্রথম আলো: নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের দিকনির্দেশনা কী থাকা উচিত।
মেহেদি আহমেদ আনসারী: প্রথম বিষয়টি হলো, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ হচ্ছে কি না, তা কঠোরভাবে তদারক করা। আরেকটি বিষয় হলো ঢাকায় অনেক জায়গাতেই মাটি ভরাট করে ভবন নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু ভরাট করার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে না। অনেক ডেভেলপার আছেন যাঁরা আর্থিক ব্যয়ের অজুহাতে এ কাজটা করতেই চান না। কিন্তু বন্যাপ্রবণ, ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা সব এলাকা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ পদ্ধতিকে বলে বলা হয় রিস্ক সেনসেটিভ ল্যান্ড ইউজ প্ল্যানিং। এ পরিকল্পনা অনুসারে নরম জায়গায় ভবন তৈরিতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সেটার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। মাটি ভরাটের সময় নিচে শক্ত মাটি যেখানটায় আছে সে পর্যন্ত দুরমুজ করে যেতে হবে। স্যান্ড কমপেকশন, জেট গ্রাউটিং, ডাইনামিক কমপেকশন, ভাইব্রোকমপেকশন পদ্ধতির মাধ্যমে মাটির উন্নয়ন করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হলো মানুষকে জানানো। কোন এলাকাটি রিস্ক সেনসেটিভ সেটা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। এসব জায়গায় ভবন নির্মাণের মাটি ঠিকমতো ভরাট হচ্ছে কি না, যথাযথভাবে পাইলিং করা হচ্ছে কি না, সেটার ওপর নজর রাখতে হবে।
প্রথম আলো: ভূমিকম্প ঝুঁকি ও সতর্কতার কথা অনেক হলো। সবশেষে আপনার কাছে জানতে চাই, আমরা কতটা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছি?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের আশপাশের অঞ্চলে ভূমিকম্পের ঘটনাগুলোর কথা তুলে ধরতে চাই। আমাদের আশপাশের অঞ্চলে ১৮৬৯ থেকে ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ১৮৬৯ সালে ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে ৭.৫ মাত্রার, ১৮৮৫ সালে ঢাকা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে মধুপুরে ৭.১ মাত্রার এবং ১৮৯৭ সালে ঢাকা থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরে ৮.৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এই ভূমিকম্পটির সময় ঢাকায় আহসান মঞ্জিল আংশিক বিধ্বস্ত হয়। তখন নবাব আহসানউল্লাহকে ১৫ দিন তাঁবুতে কাটাতে হয়েছে। সে সময় পুরো ভারতে ১ হাজার ৫৪২ জন মারা যান, যাঁর মধ্যে ঢাকায় ১০ জন। ওই সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র এক লাখ। পরিধি ছিল ১৫ থেকে ২০ বর্গকিলোমিটার। পাকা ভবন ছিল ১০০-এর মতো। এর মধ্যে আহসান মঞ্জিল, আরমানিটোলা চার্চসহ ১০ থেকে ১২টি ভবন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন ঢাকার পরিধি সিটি করপোরেশন এলাকায় ১২৭ বর্গকিলোমিটার। চারপাশের নদীসহ ধরলে ৩৭০ বর্গকিলোমিটার। রাজউকের এলাকার মধ্যে আছে ১ হাজার ৫৩০ বর্গকিলোমিটার। সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০ শতাংশই ভরাট মাটি। নদী দিয়ে মাপলে ৬৫ শতাংশ ভরাট এবং ৩৫ শতাংশ আদি মাটি।
নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কথাই যদি ধরি, মূল ভূমিকম্পটি হয়েছে কাঠমান্ডু থেকে পশ্চিম দিকে। তারপর কয়েকটি আফটার শক হয়েছে এবং সর্বশেষটি হয়েছে দার্জিলিংয়ের দিকে, যার মাত্রা ছিল ৫.৯। প্রথমটি থেকে এটার দূরত্ব ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার এবং এ ক্ষেত্রে ক্রমেই আফটার শকগুলো পূর্ব দিকে সরে এসেছে। পূর্ব দিক মানেই হচ্ছে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, আমাদের এই জোনে ২০১৫ সালের ২৬ মে থেকে ২০১৬ সালের ২৬ মের মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭ থেকে ৮ মাত্রার অন্তত একটি হবে, ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত অন্তত চারটি হবে এবং ৫ থেকে ৬ পর্যন্ত অন্তত আটটি হবে। কারণ, সৃষ্ট ফাটলের নড়াচড়া এখনো থামেনি। এর মধ্যে একটা বড় ভূমিকম্প যদি হয়ে যায় তো হলোই। তারা সেটা অনুমান করতে চাচ্ছে না।
১৮৬৯ সালের ভূমিকম্প আমাদের দিকে হয়েছে। ১৮৯৭ সালেরটিও এদিকেই হয়েছে, একই রেখা ধরে। ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার দিকে হলো; ২০০৫ সালে কাশ্মীরে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্ব দিকটায় ৮০ থেকে ১০০ বছর ধরে ডরমেন্ট হয়ে আছে। এনার্জি সঞ্চিত হচ্ছে। যেকোনো সময় এর বিচ্ছুরণ ঘটতে পারে। তাই প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়া আমাদের গতি নেই।
প্রথম আলো: তাহলে সতর্কতার ক্ষেত্রে সরকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে?
মেহেদি আহমেদ আনসারী: ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলা, দুর্যোগ প্রস্তুতি, দুর্যোগকালীন করণীয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা ও উদ্যোগের বিকল্প নেই। প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ নিলে ঝুঁকির পরিমাণটিই কমিয়ে আনা যায়। আমরা তো ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারব না। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ড, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর তদারকি এবং মানুষের সচেতনতাই পারে বড় ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে।
প্রথম আলো: আপনার মূল্যবান মতামত ও পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
মেহেদি আহমেদ আনসারী: আপনাকে ও প্রথম আলোর পাঠকদেরও ধন্যবাদ।
ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি
ঘরবাড়ির প্রস্তুতি:
* বাড়ির ছাদ ও দেয়ালে ফাটল থাকলে তা চিহ্নিত করে মেরামতের ব্যবস্থা করা।
* স্কুলের ভবন ভূমিকম্পে টিকে থাকবে কি না, সেটা পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে মজবুত করা।
বাড়িঘর নির্মাণে সতর্কতা:
* বাড়িঘর নির্মাণে সরকারি ও কারিগরি নিয়মকানুন মেনে চলা।
* বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানো।
* ভবনের উচ্চতা ও ওজনের (লোড) হিসাব অনুযায়ী শক্ত ভিত দেওয়া।
* অবকাঠামোগুলোতে রিইনফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার করা।
* গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নিরাপদভাবে স্থাপন করা।
* নরম মাটির ওপর ভবন নির্মাণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা।
* জলাশয় ভরাট করে বাড়ি বা স্থাপনা তৈরি না করা।
* জানালার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অবশ্যই দেয়ালের অর্ধেকের চেয়ে কম রাখা।
* প্রতি তলার ছাদ একই রকম রাখা।
অন্যান্য প্রস্তুতি:
* ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা এবং নিরাপদ স্থানটি জেনে রাখা।
* ভূমিকম্পের সময় নিরাপদে বের হওয়ার সঠিক পথ শনাক্ত করা।
* ভারী জিনিসপত্র কম উচ্চতায় রাখা।
* স্কুল, হাসপাতাল, ওয়ার্ড ও অন্যান্য অফিসে নিয়মিত ভূমিকম্প প্রতিকার মহড়ার ব্যবস্থা করা।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়:
* টেবিল, ডেস্ক বা বেঞ্চের নিচে আশ্রয় নেওয়া।
* বাড়িতে থাকলে খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়া।
* কাচের জানালা, ভারী জিনিসপত্র, পরীক্ষাগারের রাসায়নিক দ্রব্য এবং মাথার ওপরের ঝুলন্ত বস্তু থেকে দূরে থাকা।
* ভয় পেয়ে ওপর থেকে লাফিয়ে না পড়া।
* ঘরের বাইরে থাকলে দালান, বড় গাছপালা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ লাইন থেকে দূরে থাকা।
* দিনের বেলা সম্ভব হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বন্ধ করা। রাতে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে।
* পরবর্তী ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থাকা।
ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয়:
* বিচলিত হয়ে সবাই দরজার দিকে একসঙ্গে না দৌড়ে শান্ত ও সারিবদ্ধভাবে মহড়ার নির্দেশিত পথে বের হয়ে আসতে হবে।
* খোলা ও নির্ধারিত স্থানে আশ্রয় নেওয়া।
* ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনায় না ঢোকা, যা ভেঙে পড়তে পারে এবং আগুন লাগলে তা নেভানোর ব্যবস্থা করা।
* উদ্ধারকাজে নিজেকে নিয়োজিত করা।
* আহত মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া ।
* রেডিও ও টেলিভিশন থেকে প্রচারিত জরুরি নির্দেশাবলি শোনা এবং তা মেনে চলা।
* জরুরি প্রয়োজন ছাড়া টেলিফোন ও মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা। কারণ, এতে জরুরি সেবা বিভাগের যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
* সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সঠিক তথ্য দিয়ে সক্রিয় সহযোগিতা করা।
ঘরবাড়ির প্রস্তুতি:
* বাড়ির ছাদ ও দেয়ালে ফাটল থাকলে তা চিহ্নিত করে মেরামতের ব্যবস্থা করা।
* স্কুলের ভবন ভূমিকম্পে টিকে থাকবে কি না, সেটা পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে মজবুত করা।
বাড়িঘর নির্মাণে সতর্কতা:
* বাড়িঘর নির্মাণে সরকারি ও কারিগরি নিয়মকানুন মেনে চলা।
* বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানো।
* ভবনের উচ্চতা ও ওজনের (লোড) হিসাব অনুযায়ী শক্ত ভিত দেওয়া।
* অবকাঠামোগুলোতে রিইনফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার করা।
* গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নিরাপদভাবে স্থাপন করা।
* নরম মাটির ওপর ভবন নির্মাণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা।
* জলাশয় ভরাট করে বাড়ি বা স্থাপনা তৈরি না করা।
* জানালার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অবশ্যই দেয়ালের অর্ধেকের চেয়ে কম রাখা।
* প্রতি তলার ছাদ একই রকম রাখা।
অন্যান্য প্রস্তুতি:
* ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা এবং নিরাপদ স্থানটি জেনে রাখা।
* ভূমিকম্পের সময় নিরাপদে বের হওয়ার সঠিক পথ শনাক্ত করা।
* ভারী জিনিসপত্র কম উচ্চতায় রাখা।
* স্কুল, হাসপাতাল, ওয়ার্ড ও অন্যান্য অফিসে নিয়মিত ভূমিকম্প প্রতিকার মহড়ার ব্যবস্থা করা।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়:
* টেবিল, ডেস্ক বা বেঞ্চের নিচে আশ্রয় নেওয়া।
* বাড়িতে থাকলে খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়া।
* কাচের জানালা, ভারী জিনিসপত্র, পরীক্ষাগারের রাসায়নিক দ্রব্য এবং মাথার ওপরের ঝুলন্ত বস্তু থেকে দূরে থাকা।
* ভয় পেয়ে ওপর থেকে লাফিয়ে না পড়া।
* ঘরের বাইরে থাকলে দালান, বড় গাছপালা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ লাইন থেকে দূরে থাকা।
* দিনের বেলা সম্ভব হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বন্ধ করা। রাতে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে।
* পরবর্তী ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থাকা।
ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয়:
* বিচলিত হয়ে সবাই দরজার দিকে একসঙ্গে না দৌড়ে শান্ত ও সারিবদ্ধভাবে মহড়ার নির্দেশিত পথে বের হয়ে আসতে হবে।
* খোলা ও নির্ধারিত স্থানে আশ্রয় নেওয়া।
* ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনায় না ঢোকা, যা ভেঙে পড়তে পারে এবং আগুন লাগলে তা নেভানোর ব্যবস্থা করা।
* উদ্ধারকাজে নিজেকে নিয়োজিত করা।
* আহত মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া ।
* রেডিও ও টেলিভিশন থেকে প্রচারিত জরুরি নির্দেশাবলি শোনা এবং তা মেনে চলা।
* জরুরি প্রয়োজন ছাড়া টেলিফোন ও মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা। কারণ, এতে জরুরি সেবা বিভাগের যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
* সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সঠিক তথ্য দিয়ে সক্রিয় সহযোগিতা করা।
If you have any doubt , let me know.