{ads}

দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম: The largest rubber dam in the country

দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম



চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে দেশের সর্ববৃহৎ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দশম রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নদীর উভয় তীরের ৮ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা পাবে যা থেকে বছরে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কৃষি ফসল ও গাছ উৎপাদন এবং বছরে দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হবে। 

বাঁধটি বাঁধ এলাকার নিচে বসবাসকারী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে।

ফারাক্কা ব্যারেজের বিরূপ প্রভাব, জমি শুকিয়ে যাওয়া, ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহার, কম বৃষ্টিপাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক প্রভাবের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানদা নদীর পাশে বসবাসকারী মানুষ বহুবর্ষজীবী পানির সংকটের সম্মুখীন হয়। 

এই বাঁধটি মহানন্দা নদীকে সারা বছর 15 থেকে 20 ফুট জল ধরে রাখতে সাহায্য করবে। কৃষকরাও তাদের ফসল চাষ করতে পারবে এবং জেলেরা এই বাঁধ এলাকা থেকে বছরের কাছাকাছি সময়ে মাছ সংগ্রহ করতে পারবে।

স্থানীয় লোকজন জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় মোহনন্দা নদী ও আশপাশের এলাকার মানুষ হাতের টিউবওয়েল থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করতে পারছে না। ভূগর্ভস্থ পানির অভাবে এলাকার অনেক হাত নলকূপ অচল হয়ে পড়েছে। 

রাবার ড্যাম নির্মাণের পর নদীতে পানি পূর্ণ থাকবে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও রিচার্জ হবে এবং মানুষ সহজেই তাদের হাত-টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানীয় জল পাম্প করতে পারবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া গ্রামের লিঙ্গ চাষী আহমেদ আলী জানান, বাঁধটি চালু হলে নদীর তীরবর্তী অনেক পতিত জমি সেচ সুবিধা পাবে এবং সেখানে ফসল ফলবে। এমনকি বরেন্দ্র অঞ্চলের শত শত একর জমি সেচের সুবিধা পাবে এবং মরুকরণের কবল থেকে এ অঞ্চল রক্ষা পাবে। ফলে যত দ্রুত সম্ভব রাবার ড্যাম প্রকল্পের কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।

চাঁপাইনওয়ানগঞ্জ সদর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শামসুল আলম জানান, নদীতে আজকাল মাছ খুব কমই পাওয়া যায়। বর্ষাকাল ব্যতীত, মহানন্দা নদী পরবর্তী আট-নয় মাস শুষ্ক ও ক্লান্ত থাকে এবং নদীর তীরগুলি কার্যত শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের খেলার মাঠে পরিণত হয়। আমরা আশা করি, রাবার ড্যাম নির্মাণের পর নদীটি পানিতে ভরাট থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত মাছের উৎপাদনও বাড়বে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রামাণিক জানান, রাবার ড্যামটি বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু জমিতে সেচ সুবিধা বাড়াবে এবং ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারও কমবে।

এ অঞ্চলের আশেপাশের পতিত জমিতেও চাষাবাদ করা হবে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পুনরুদ্ধার করা হবে।

ইতিমধ্যে রাবার ড্যাম প্রকল্পের ৮৭ শতাংশ (৩৯৩) মিটার কাজ শেষ হয়েছে এবং আশা করা যাচ্ছে আগামী জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান। তিনি আরও উল্লেখ করেন, নাব্যতা ধরে রাখতে নদী ড্রেজিং এবং রাবার ড্যাম নির্মাণের কাজ ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ১৮৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে ব্যয় বাড়িয়ে ২৫১ কোটি টাকা করা হয়।

তিনি বলেন, নদীর উপরের স্রোত ও ভাটির ৩৬ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরকালে মোহনন্দা নদীর রাবার ড্যাম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ বিশ্বাস বলেন, রাবার ড্যাম প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর জন্য একটি বড় উপহার। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে এলাকার ৮০ কিলোমিটার এলাকার হাজার হাজার জেলে ও কৃষক উপকৃত হবেন।    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.