সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে যা জানা দরকারঃ
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার পথ। আপনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানা প্রয়োজন:
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারঃ
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সাহায্য করে থাকেন। কারিগরি দক্ষতা আর সৃজনশীলতা থাকলে এ পেশায় সফলতা অর্জন করা খুবই সহজ। আবাসন খাত, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল ও টেকসই শিল্পনির্ভর উন্নয়নের জন্য একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এক নজরে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার
সাধারণ পদবী: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারবিভাগ: ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল-টাইম
লেভেল: এন্ট্রি, মিড, টপ
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: ০ – ২ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য আয়: ৳২৫,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা: ২২ বছর
মূল স্কিল: গাণিতিক জ্ঞান, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, কম্পিউটার মডেলিং সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষতা
বিশেষ স্কিল: সৃজনশীলতা, আঁকাআঁকির দক্ষতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কোথায় কাজ করেন?
অবগকাঠামোগত নির্মাণের যেকোন কাজ ও প্রকল্পের সাথে সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা যুক্ত থাকেন। যেমন:
- ব্যক্তিগত বাড়ি নির্মাণ
- আবাসন প্রকল্প
- অফিস নির্মাণ প্রকল্প
- বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প
- সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্প
- রেলপথ নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্প
- সেতু নির্মাণ প্রকল্প
- বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প
- কলকারখানা নির্মাণ প্রকল্প
- বন্দর নির্মাণ প্রকল্প
আমাদের দেশে সরকারি বহু প্রতিষ্ঠানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পদ রয়েছে। যেমন:
- স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED)
- সড়ক ও জনপথ বিভাগ
- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মতো প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়মিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়ে থাকে। এছাড়া, সামরিক বাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
বর্তমানে বহু নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারবেন। বিশেষ করে আবাসন বা রিয়েল এস্টেট খাতে এ পেশাজীবীদের চাহিদা লক্ষণীয়।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কাজ কী?
- অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পরিচালিত জরিপের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা
- সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরি করা
- প্রকল্পের বাজেট, ঝুঁকি, পরিবেশের উপর প্রভাব ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয় খতিয়ে দেখা
- প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারি অনুমোদনের দরকার হলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া
- কম্পিউটার মডেল বানানো
- প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাঁচামালের খরচ, যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় কর্মীসংখ্যার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জানানো
- প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা
- প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রীর মান নিশ্চিত করা
- প্রকল্প চলার সময় নির্মাণ সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ডের তদারকি করা
- প্রকল্পে নিযুক্ত কর্মীদেরকে উপযুক্ত নির্দেশনা দেয়া
- প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করা
- প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে কারিগরি পরামর্শ দেয়া
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আপনার অবশ্যই বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা উপ-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারেন।
বয়সঃ প্রকল্পভেদে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। সাধারণত আপনার বয়স কমপক্ষে ২২ বছর হতে হবে।
অভিজ্ঞতাঃ এ পেশায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য রয়েছে। বিশেষ করে বড় প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্য অভিজ্ঞতার কোন বিকল্প নেই।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?
এ পেশায় কাজ করতে হলে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে ভালো জ্ঞান থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি নকশা ও মডেলিংয়ের কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে আপনাকে। যেমন:
- AutoCAD
- AutoCAD Civil 3D
- Revit
- InfraWorks
- SAP 2000
- ETABS
কারিগরি জ্ঞানের পাশাপাশি আরো কিছু দক্ষতা দরকার হবে আপনার। যেমন:
- চিন্তাভাবনায় সৃজনশীলতা থাকা
- আঁকাআঁকির দক্ষতা
- বিশ্লেষণী ক্ষমতা
- খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারা
- প্রকল্প ব্যবস্থাপনা
- কর্মী ব্যবস্থাপনা
- আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কারিগরি সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
- জরুরি অবস্থায় মানসিক চাপ সামলে সিদ্ধান্ত নিতে পারা
কোথায় পড়বেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং?
বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। পাশাপাশি ভোকেশনাল বা পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটগুলো থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নেবার ব্যবস্থা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট (IEB) অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়া শ্রেয়। এর কারণ হলো, কিছু কিছু জায়গায় আইইবির অনুমোদনহীন সার্টিফিকেটধারী ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ পেতে সমস্যা হয়।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় কেমন?
প্রতিষ্ঠান ও কাজ ভেদে এন্ট্রি লেভেলে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় সাধারণত ৳২০,০০০ থেকে শুরু করে ৳৫০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে। সরকারি খাতে জাতীয় বেতন স্কেল অনুসরণ করে সাধারণত ৯ম জাতীয় গ্রেডে ৳৩২,০০০ স্কেলে নিয়োগ দেয়া হয়, যা পরবর্তীতে পদোন্নতির সাথে সাথে বেড়ে যায়।
চাকরির পাশাপাশি অনেক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন। তবে এর জন্য কারিগরি কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে আপনার ক্যারিয়ার শুরু হবে। চাকরির ৩-৫ বছরের মধ্যে পদোন্নতি পাবেন। এ ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরকারি পদ হলো প্রধান প্রকৌশলী। প্রাইভেট ফার্ম বা কোম্পানির ক্ষেত্রে একজন ব্যবস্থাপনা নির্বাহী হিসাবে নিয়োগ পেতে পারেন।
বেসরকারি খাতে অনেকে কনসালট্যান্ট ফার্ম বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে স্বাধীনভাবে কাজ করেন।
If you have any doubt , let me know.